উত্তরাঞ্চলের এখন পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নিষিদ্ধ ঘোষিত ফেনসিডিল পরিবহনে আগ্রহী হয়ে উঠছে

অভাবের সংসারে সচ্ছলতা আনতে ঝুঁকি আছে যেনেও উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার নারীরা নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় ফেনসিডিল বহনের কাজে জরিয়ে পড়ছে। আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো এ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে। অপর দিকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দুর্বলতার সূযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ভারতীয় ফেনসিডিল আমদানীকারক গডফাদারেরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।


দামে কম আর সহজেই আমদানীর সূযোগে নওগাঁর বিভিন্ন সীমান- দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার খোলা ফেনসিডিল বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আমদানী কারক গডফাদারেরা নওগাঁর বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত ধামইরহাট.মান্দা,মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুরের প্রত্যন- গ্রামাঞ্চলে খোলা ভাবে আমদানী করা সকল ফেনসিডিল বোতল জাত করে লেবেল এটে দালালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ কাজে রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার অভাবী নারীদের এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ।

নওগাঁর বিভিন্ন থানার তথ্য অনুসারে গত ১ বছরে ফেনসিডিল বহনের দায়ে প্রায় ৫শ নারীকে ফেনসিডিল বহনের সময় মালামাল সহ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অধিকাংশ সময়েই ডিবি পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কিম্বা ট্রাফিক সার্জেন্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এসকল ফেনসিডিল আটক করে। মালামাল সহ বাহককে আটকের পর মামলার তদন-ভার থানা পুলিশের হাতে থাকায় থানা পুলিশ অজ্ঞাত কারণে কখনোই এ সকল মালামালের মূল মালিককে ধরার চেষ্টা করলেও সঠিক প্রমানের অভাবের কারনে এরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে ফেনসিডিল আটককারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে।

ধরা পরার পর বিভিন্ন থানায় ফেনসিডিল বহন কারী নারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে নওগাঁয় তারা প্রতি বোতল ফেনসিডিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কিনতে পায়। এ সকল ফেনসিডিল শুধু মাত্র ঢাকায় বহন করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ৭শ টাকায় বিক্রি করে থাকে। এতে করে একজন বাহক ১০ বোতল ফেনসিডিল ঢাকায় নিতে পারলেই লাভ হয় ১২শ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন-। তারা আরো জানায় একেকজন বাহক সপ্তাহে ২ থেকে ৪ বার এই নিষিদ্ধ ফেনসিডিল বহন করার পাশাপাশি নিজেও ফেনসিডিল আশক্ত হয়ে থাকে।

ফেনসিডিল বহনকারী ধরা পরা নারীদের সাথে কথা বলে মালামালারের মূল মালিকের নাম ঠিকানা জানার চেষ্টা করা হলে তারা জানায় নিজ অর্থ লগ্নি করে তারা মালামাল কিনে বহন ও বিক্রি করে। তাই তারা কখনোই মালামালের মূল মালিক কে, তা তারা জানতে পারে না। তাদের মতে মালামাল কেনার সময়ে দরদামে কথাকাটাকিটি হলেই শুধুমাত্র মালামাল সহ তারা ধরা পড়ে। তারা অভিযোগ করে জানায় এক সঙ্গে ১০ জনের দল মালামাল নিয়ে যাবার সময়েও অনেক সময় দেখা গেছে ধরা পড়ে মাত্র ৩/৪ জন। আলাপকালে তারা আরো জানায় নওগাঁ থেকে ঢাকায় ফেনসিডিল বহনের জন্য নওগাঁর মান্দা থেকে ছেড়ে যাওয়া সৌখিন পরিহন, দ্রুতি পরিহন,রকি পরিবহন, সোনার তরী ইত্যাদি নামের 'মফিজ' পরিবহনগুলো কিছুটা নিরাপদ। কেননা এ সকল বাস অনেকটা লোকালের মতো যেখানে সেখানে যাত্রী তোলায় তারা রাস-ার মধ্যেই গাড়ীগুলোতে চড়তে পারে। এ ছাড়া এ সকল গাড়ী নিয়মিত চেকিংও হয় না। তাদের মতে নওগাঁর জেলা সীমান- পার হয়ে গাড়ীতে উঠলে আর ধরা পরার কোন ভয় থাকে না। তাই তারা বিভিন্ন পথে বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার বিভিন্ন অঞ্চলে এ সকল বাসে উঠে থাকে।
আলাপ কালে এ সকল ধরা পড়া নারীরা জানায় আয়ের এত সহজ পথ থাকায় তারা এ পেশা ছাড়তে রাজি নয়। ২/৪ সপ্তাহের জন্য হাজতবাসকে এরা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার বলেই মনে করে। তবে যখন কেহ প্রথমবার ধরা পড়ে তখন কিছুটা ভয় পায় কিন' একবার এ ভয় কেটে গেলে আর কিছুই মনে হয় না। ফেনসিডিল বহন কারী এক এসকল নারীরা বেশ জোর দিয়ে বলে অন্যায় জেনেও পরিশ্রম করে আয় করছি যা অনেক নারীই করে না। তারা এ পেশাকে মোটেও অন্যায় মনে করে না।

সূত্রঃ এসএনএনবিডি

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

পুদিনা চাষ ও গুনাগুন