“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

যুদ্ধ অর্থাৎ নিষ্ঠুরতা এবং মানবতার মৃত্যু। তবুও কখনও যুদ্ধ করতে হয় জাতিকে বাঁচাবার জন্য যুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আঘাতে বিশেষ ভাবে আক্রান- নারী ও শিশুরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে নিরিহ জনগনের উপর পাকিসৱানী সেনাবাহিনীর আগ্রাসনে এবং ২৬৬ দিন ব্যাপী পাইকারী গনহত্যা এবং নির্যাতনের ফলে প্রায় ত্রিশ (৩০) লাখ লোক শহীদ হয় বলে ধারনা করা হয়। এই বিপুল সংখ্যক নর- নারী তুলুনায় উভয় পক্ষের সেনা- সদস্য ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা অতি নগন্য। একাত্তরে দেশের অন্যান্য স‘ানের ন্যায় তৎকালিন নওগাঁ মহকুমাতে নারীরা নির্যাতিত ও ধর্ষিত হয়েছেন। স্বাধীনতার এত বছর পর লোকলজ্জার ও সামাজিকতার দিকে চেয়ে কেহই মুখ খোলেননি, সংগত কারনেই শম্ভ্রম হারানো মায়েদের সর্বচ্চো ত্যাগের ইতিহাসটি অনুদৃঘটিত রয়ে গেল । হাতে গোনা কিছু মানুষ বাদে মুক্তিযুদ্ধের গোটা জাতি অংশ গ্রহন করেছিল, বাঙ্গালির অসপ্রদায়িক চেতনা ধর্মীয় সপ্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করেছিল” জাগো – জাগো বাঙ্গালি জাগো ”, তোমার আমার ঠিকানা – পদ্মা- মেঘনা – যমুনা ”, “ বীর বাঙ্গালি অস্ত্রধর – বাংলাদেশ স্বাধীন কর”, “ কুর্মিটলা দখল কর বাংলাদেশ স্বাধীন কর ”, এই ছিল লক্ষ কোটি বাঙ্গালির শ্লোগান। বাঙ্গালিরা কে মুসলমান আর কে হিন্দু বা খ্রিষ্টান এর হিসাব মিলাবার প্রয়োজন ছিলনা। কে কখন মস্জ্বিদে যায় আর কে কখন মন্দিরে যায় কিংবা গির্জায় যায় বা প্যাগোডায় এর আবিষ্কারের চেষ্টা ও আসলে অর্থহীন, ব্যক্তি জীবনের ধর্মাচারে এই বিচার বিশ্লেষন কিংবা মরজিদ- মন্দির আর গির্জা- প্যাগোডার নামে মানবতার রক্তাক্ত বিভাজন মানুষের অর্জিত সভ্যতার পরিপন‘ী এক মাত্র ধর্ম কে পুজি করে যারা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায় তারাই মানুষকে এভাবে বিভক্ত করে । এতে ধর্মের লাভ নেই, ধার্মিকেরও লাভ নেই , লাভ রাজনীতিকে পুজি করে য়ারা ব্যবসা করে ,তাদের। ইউরোপে আজও হিটলারের স্বগোত্রীয়দের বিচারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের গনহত্যা আর মানবতা বিরোধী ভূমিকার অপরাধে। নব্য নাজীদের আহত্ত হয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে জার্মান এবং ফরাসী – পুলিশ মানবতা বিরোধীদের সহযোগী হিসাবে তুলছে তাদের বিচারের কাঠগড়ায়। কিন‘ এই বাংলাদেশের একজন যুদ্ধাপরাধীকেও বিচারের কাঠগড়ায় দাড়াতে হয়নি তাদের পাপের প্রায়শ্চিত করতে । অথচ আমরা বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনতা দিবস পালন করছি। পারন করছি বিজয় দিবস । প্রতি বছর মুক্তি যুদ্ধ আর শহীদদের নামে রাজনীতি করছি । আমরা ওদের কবরের খোঁজটি পর্যন- রাখিনি । রাখার প্রয়োজনটি পর্যন- বোধ করিনি, প্রয়োজন বোধ করিনি ওই শহীদদের পরিবার গুলো কি করে বেঁচে আছে।কি করে জীবন যাপন করছে, তার খোঁজ নিতে। অথচ ওই শহীদদের নাম ভাঙ্গিয়েছে অবলীলায়। শুধু তাই নয় , ক্রমান্বয়ে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের র্পুনবাসিত করা হয়েছে এই সমাজে। রাজনীতিতে, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে।জানিনা এই দুঃখ থেকে জাতি মুক্ত হবে কিনা কখনো ? মহান মুক্তি যুদ্ধের ঐতিহাসিক ক্ষত থেকে আমার এই সৃষ্টি- “ নওগাঁয় মুক্তি যুদ্ধে গনহত্যা ”, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তরান্বিত করার লক্ষে আমার এ লেখা দালিলিক প্রমান হিসাবে বিচার কার্যে এতটুকু সহয়োগিতা করলে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ও লেখক হিসাবে তৃপ্ত হবো।

২২ এপ্রিল ১৯৭১, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২ টা। নওগাঁর আকাশে পাকিস-ানী দুটি জঙ্গিঁ প্লেন কয়েক বার চক্কর দিয়ে উধাও হয়ে গেল। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজের ছাদে স‘াপনকৃকত এন্ট্রি এয়ার ক্রাফট মেশিনগানটি কোন প্রতিবাদ করলনা। মুখ থুবরে পড়ে রইল। প্রচন্ড বর্ষন। নওগাঁ মহকুমা হানাদারদের দখলে চলে গেল। ঐ দিন রাতে নওগাঁয় বাঙ্গালি দালাল ও অবাঙ্গালীদের সমন্বয়ে শানি- কমিটি গঠন করা হয়। শানি- কমিটির ছত্রছায়ায় পাকসেনারা রাজাকারদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নওগাঁর চারপাশের অঞ্চল ও থানা এলাকায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সেইসাথে অগ্নি সংযোগ, গণহত্যা, নারী ধর্ষণ ও লুটপাটে লিপ্ত হয়। গ্রাম থেকে নিরীহ যুবক-যুবতীদের ধরে আনা হয়। মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগে যুবকদের নির্মম ভাবে হত্যা করা এবং যুবতিদের উপর চালানো হয় পাশাপাশি দৈহিক নির্যাতন। কে মুক্তিযোদ্ধা বা জয় বাংলার সমর্থক এই প্রাথমিক সনাত্তকরনের কাজ করত শানি- কমিটির লোকজন। সনাত্তকরনের পরে তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হত। ২২ এপ্রিল ১৯৭১ নওগাঁ শহরের আকালু নামের পাগল লর্ড লিটন ব্রিজের পূর্ব পার্শ্বে পাকিস-ানী সেনাবাহিনীর সামনে “হয় বাংলা” শ্লোগান উচ্চারণ করতে থাকলে তাকে সেখানেই ব্রাশফায়ার করে যমুনা নদীতে তার লাশ নিক্ষেপ করা হয়। তার বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর। অনুসন্ধানে জানা যায় যে চকবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। নওগাঁতে পাক হানাদার বাহিনী হাতে নিহত প্রথম শহীদ আকালু পাগল। এর পর পরই ব্রিজ মোড় সংলগ্ন নিজ বাসভবনে শহীদ হন ক্ষেত্রলাল শাহার স্ত্রী শ্রীমতি বালা শাহা। তার লাশের কোন সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।

পার নওগাঁ মধ্যপাড়া বর্দ্ধভূমিঃ

২২ এপ্রিল ১৯৭১ পার নওগাঁ মধ্যপাড়ায় ভাড়ার বাড়িতে বসবাস রত কুমিল্লা জেলার চাঁদপুর নিবাসী আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারের ৫ জন সদস্য এর মধ্য ৪ জনকে জবাই করে হত্যা করে বিহারী সমপ্রদায়।


১) শহীদ আব্দুর রাজ্জাক (৫০) ব্যবসা। পিতা বভেন মন্ডল। ২) স্ত্রী রুমিছা বেগম (৪০) গৃহিনী , পুত্র মন্টু (১৯) ছাত্র , ৪) কন্যা সনেফা (১২) ছাত্রী কে জবাই করে আসগর সরদারের বাঁশের ঝারের পূর্ব উত্তর কোনে পুতে রাখে। তাদের একমাত্র ১ বছরের পুত্র সন-ান জিপ্পু প্রাণে বেঁচে যায়। সে এখন বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল হোসেন চৌধুরী বাড়িতে পুত্র সন-ান সহ বসবাস করছে।

ধামকুড়ী বদ্ধভূমিঃ

ধামকুড়ী গ্রাম তৎকালিন নওগাঁ মহকুমার অন-গত হলেও গ্রামটি ছিল বগুড়া জেলার সীমান- রেখার সান-াহারের সন্নিকোটে ।দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার ১২এপ্রিল ১৯৭১।দুপুর আনুমানিক ১টা হবে হয়তো ।ছোট্র এই গ্রামটি দু, দিক থেকে হানাদার বাহিনী ঘিরে ফেলে। এ সময় গ্রামটি প্রায় জনমানব শুন্য, দু,এক জন অসীম মনোবল ও বুকে সাহস বেঁধে বাড়িতেই ছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম পুলিশ ইন্সপেক্টর সামসুদ্দিন সরদার হানাদাররা তার বাড়িতে সামনে এলে তিনি ইউনিফরম পরা অবস‘ায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন হাতে তার সাদা পতাকা, হানাদাররা বাড়িতে অন্যান্য পুরুষদের বের করে এনে বাড়ির খলিয়ানে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হলেন অন্যান্য দের মধ্যে একই পরিবারের

১। সামসুদ্দিন সরদার (৫৬) পিতা মৃত ছমির সরদার ২। নূরল ইসলাম সরদার (৫০) সান-াহার আজাদ সিনেমা হলের ম্যানেজার পিতা ছমির সরদার। ৩।আব্দুস সামাদ (৪৭) নওগাঁ মুকুল প্রেসের সত্বাধিকারী পিতা ছমির সরদার ৪। আমিনুল ইসলাম (২৪) বুয়েটের শেষ বর্ষের ছাত্র পিতা নুরল ইসলাম ৫।এনামুল ইসলাম মান্না (১৮) মাট্রিকে ষ্টার প্রাপ্ত ,বিরামপুর কলেজে ইন্টারমিডিয়েট এ অধ্যায়ন রত ছাত্র । ৬। সাহেব পালেয়ান (৪৫) পিতা কছির উদ্দিন প্রামানিক সকলের গ্রাম নওগাঁ সদর থানার অধীনে ধামকুড়ি ।৮।শাহাপুর গ্রামের বীর মুক্তি যোদ্ধা বকুলের পিতা ইব্রাহিম খন্দকার (৫৫)স্বাস‘্য বিভাগের পরিদর্শককে হত্যা করে । এই নির্মম হত্যকান্ড চলাকালে সালাউদ্দিন মিন্টু (১০) পিতা সামসুদ্দিন সরদার ডান হাতে গুলি লেগে আহত হয় । এখন তিনি নওগাঁ জর্জ কোর্টে আইন পেশাই জড়িত। এ সময় হানাদার বাহিনী কমরন বেওয়ার গচ্ছিত সোনা, রুপা. ও অর্থ লুুন্ঠন করে ।বদ্ধভূমিতে লাশগুলো এই অবস‘াই পড়ে থাকে । বেশ কিছুদিন পর গ্রামের লোকজন লাশের হাঁর কংকাল গুলো একত্রিত করে বাড়ীর কোনায় সমাহিত করেন ।

গত ১৭-১২-০৭ তারিখে নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এস.এম.সিরাজুল ইসলাম এর প্রচেষ্টয় নওগাঁর পুলিশ সুপার সরদার নূরল আমিন বদ্ধ ভূমির নাম ন্যয় ফলক উন্মোচন করে । ৮ জন শহীদকে রাষ্ঠ্রীয় স্বীকৃতি দেন।

২৩ এপ্রিল ,১৯৭১ পার নওগাঁ পূর্ব পাড়া বদ্ধভূমিঃ

এই দিনে পার নওগা পূর্ব পাড়া বদ্ধভূমিতে হানাদার বাহিনী পাঁচজনকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। যথাক্রমে

১। শহীদ মকবুল হোসেন পিতা শুকচাঁন্দ আলী মন্ডল ২। শহীদ ওসমান আলী সরদার পিতা মৃত কাসের বক্‌্র সরদার ৩। শহীদ আশরাফ আলী পিতা মেহের মন্ডল ৪। শহীদ আলাউদ্দিন পিতা মেহের মন্ডল ৫। শহীদ মজিবর রহমান, পিতা সাহেব মন্ডল, সর্ব সাকিন পার নওগাঁ, নওগাঁ। ঐ দিন পার নওগাঁ মহল্লার ডাঃ গায়েন উদ্দিনের পুত্র মোঃ জাহাঙ্গীর আলম কে কয়েক রাউন্ড গুলি করলেও সৌভাগ্য ক্রমে তিনি বেঁচে যান। এই পাঁচজনকে পার নওগাঁ পূর্ব পাড়ার বদ্ধ ভূমিতে পুঁতে রাখা হয়।

২৩ এপ্রিল ১৯৭১ পাক সেনাদের হাতে নওগাঁর মোহনপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম মঘরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, দশপাই গ্রামের বাচ্চু ও মমতাজ উদ্দিন শহীদ হন, এদের লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। ২৫ এপ্রিল হানাদার বাহিনী আক্রমন করে কুমরিয়া, জাদরাবাদ, লক্ষনপুর, মোহনপুর, হাঁপানিয়া, একডালা ও মাধাইপুরি গ্রামে অগ্নি সংযোগ করে সেই সাথে চালায় হত্যাকান্ড। হানাদাররা কুমারিয়া গ্রামের মেরু মন্ডল, হাফরাবাদ গ্রামের আকালু মন্ডল, ফয়েজ মন্ডল ও আলী মন্ডণকে হত্যা করে।মোহনপুর গ্রামের তরফদার পাড়ায় নারী সহ ১১ জন শহীদ হন। যথাক্রমে রাজশাহী কলেজের অংক বিভাগের অধ্যাপক ১। প্রফেসর ফজলুল হক ২। তাঁর মাতা ফতেমন বিবি ৩। ভগ্নি রওশন আরা ৪। ভাই মাসুদুর রহমান ৫। মকলেছুর রহমান ৬। আজিজুল ইসলাম ৭। আব্দুল জব্বার ৮। আব্দুল হামিদ ৯। আব্দুল আলী ১০। তারই মাতা এবং ১১। ইয়াছিন আলী । ঐ একই দিনে হানাদার বাহিনী মাধাইসুরি গ্রামের বিশিষ্ঠ সমাজসেবক আলিম উদ্দিন খাঁকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। সেই সাথে পিতা- পুত্র মিলন ও আলিম সাহাকেও হত্যা করে ।মহান মুক্তি যুদ্ধ চলাকালে পাকিস‘ানি হানাদার বাহিনী বিক্ষপ্ত ওবিচ্ছিন্ন ভাবে সমগ্র নওগাঁ জেলায় অসংখ্য হত্যাকান্ড সংঘটিত করছে । আমি সেই সকল মহৎপ্রান শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে সরন করছি ।

নওগাঁ ষ্টেডিয়াম বধ্যভূমিঃ

২২এপ্রিল বিকেলে নওগাঁ ষ্টেডিয়াম মাঠের পূর্বউত্তর কোন ঘিষে ম্যালেরিয়া অফিস ছিল । কদম গাছের নিচে হানাদার বাহিনী

১। মন্টূ পিতা অছির চেয়ারম্যান ২। আব্দুল বারী পিতা অঙ্গাত ৩। মজিবর রহমান পিতা মছির সর্ব শাকিন রজাকপুরে গুলি করে হত্যা করে । বিহারী সমপ্রদায় এই লাশগুলো দিঘীতে ফেলে দেয় । পরের দিন লাশের ওয়ারিশরা দিঘী থেকে লাশ গুলো তুলে নিয়ে গিয়ে পারিবারিক গোরস‘ানে সমাহিত করেন ।

শেখপুরা বধ্যাভূমিঃ

২৩ এপ্রিল পাক হানাদার ও বিহারীদের সহায়তায় শেখপুরা গ্রামের

১। ছালেহা বেগম স্বামী ওছির মন্ডল ২। জসিম পিতা অঙ্গাত কে গুলি করে হত্যা করে এবং অছির উদ্দিন মাষ্টারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে । এই দিন হানাদার বাহিনী ৪। রিয়াজ উদ্দিন মোল্লা পিতা মৃত নেওয়াজদি মোল্লা ৫। ময়না বিবি স্বামী লিল চাঁদ প্রামানিককে বোয়ালিয়ার জয় বাংলা হাটে গুলি করে হত্যা করে । এদের সর্ব সাকিন শেকপুরা । ২৩ এপ্রিল নওগাঁ সদর থানায় বলিহার ইউনিয়নের বাসিন্দা নওগাঁ বিশিষ্ট সঙ্গীত বিশারদ ওস-াদ মানিক কিশোর স্যান্নাসি চক্রবর্তীকে হানাদার বাহিনী গায়ে পেট্রোল ঢেলে জীবন- পুরিয়ে হত্যা করে । তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ।

মহদেবপুর বাজিতপুর বধ্যভূমিঃ

২৪ এপ্রিল ১৯৭১, বাংলা ১২ পৌষ, সোমাবার, সকাল ১০ টায় মহাদেবপুর থানার বাজিতপুর ও চকদৌলত গ্রাম দুটি দু,দিক থেকে ঘিরে ফেলে হানাদার বাহিনী, ১২ জন নিরিহ জনগনকে সারিবব্ধ ভাবে দাঁর কড়িয়ে নিবিচারে গুলিকরে হত্য করে । এদের মধ্য ্ওক জন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান । তিনি আজও জিবিত ।

১।তয়েজ উদ্দিন (৫০) পিতা কুশি মন্ডল পেশা কৃষি ২। জাহান আলী (৫২) পিতা কুমির মন্ডল পেশা কৃষি ৩। জাকির আলী (৪৯) পিতা শফিউদ্দিন পেশা কৃষি ৪। হোসেন আলী (৪২) শফিউদ্দিন পেশা কৃষি ৫। গায়েন উদ্দিন (৫০) পিতা আকবর আলী পেশা কৃষি ৬। আব্দুল আজিজ (৪৩) পিতা মাস‘ুল মন্ডল পেশা কৃষি ৭। মফিজ উদ্দিন (৬৫) পিতা কছির মন্ডল পেশা কৃষি । ৮। শফি উদ্দিন (৪০) অঙ্গাত পেশা ড্রাইভার । ৯। কফিল উদ্দিন (৫০) পিতা লাটু পেশা কৃষি ১০। ডাঃমোফাজ্জল (২৫) পিতা নজর আলী পেশা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ১১।সোহেল হোসেন (শিশু) নজর আলী (১২) গফুর আলী (৭০) পিতা শরত মন্ডল পেশা কৃষক ১৩। মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল (৭০) পিতা ছানু মন্ডল পেশা শিক্ষক, গুলি বিদ্ধ অবস‘ায় এখন পর্যন- পঙ্গুঁত্ব বরন করে বেঁচে আছেন ।

ফতেপুর গড়ের হাট বদ্ধভূমিঃ

২৫ এপ্রিল ১৯৭১। নওগাঁ সদর থানার তিলেকপুর ইউনিয়নের ফতেপুর গড়ের হাট। ভোর রাতে হানাদার ও রাজাকার বাহিনী গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে লুটতারাজ ও অগ্নি সংযোগে মেতে উঠে। সেই সাথে পার্শবর্তী গ্রাম থেকে যুবকদের ধরে এনে হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে ।

১। গিয়াস উদ্দিন (২০) পিতা কোকাই সরদার গ্রাম দেবীপুর ২। সাযেদ আলীম (২২) পিতা মৃত মোমিন সরদার গ্রাম কাদোয়া ৩। কায়সার আলী (২২) পিতা মৃত শুকুর সরদার গ্রাম কাদোয়া ৪। জহির উদ্দিন (৩৬) পিতা রুবিয়া সরদার গ্রাম দেবীপুর ৫। ছায়েদ আলী (৩০) পিতা মৃত ভোলা মন্ডর গ্রাম ফতেপুর ৬। আব্দুল জব্বার (২৮) পিতা মৃত জপরা মন্ডর গ্রাম ফতেপুর ৭। আকিম উদ্দিন (২৮) পিতা মৃত শরিফত সরদার গ্রাম ফতেপুর ৮। কায়সার আলী (৩৫) পিতা মৃত শশী মন্ডল গ্রাম ফতেপুর ৯। গোলাম রসুল (৩০) পিতা মৃত কান্দুর সরদার গ্রাম ফতেপুর ১০। আজাহার আলী (২০) পিতা খয়বর আলী গ্রাম ফতেপুর ১১। নূরল ইসলাম (১৮) পিতা ফজলুর রহমান গ্রাম দেবীপুর ১২। হবিবর রহমান (৩৫) পিতা মৃত পরবতী সরদার গ্রাম দেবীপুর ১৩। অঞাত (১৪) পিতা অঞাত গ্রাম অঞাত । এদের কে পাক হানাদার বাহিনী লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে। মৃতদেহ গুলো পুকুরে ফেলে দেয়। এদের মধ্যে থেকে নূরল (৫০) পিতা মৃত রাফাই মন্ডল ঘাড়ে গুলি লেগে আহত হন। এছাড়া কাদোয়া গ্রামের মৃত দেলোয়ার প্রামানিকের পুত্র ইয়াছিন আলী (১৯) মৃত দেহের স‘পের মধ্যে থেকে জীবিত অবস‘ায় উঠে আসে। এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ফতেপুর গড়ের বাড়ী বদ্ধভূমিতে স্মৃতিসৌধ্য নির্মান করা হোক। দীর্ঘ ৩৭ বছরে কেউ সেই দাবী রক্ষা করেনি।

দোগাছি বদ্ধভূমি, ২৫ এপ্রিল ১৯৭১


নওগাঁ জেলার সদর থানাধীন পিরোজপুর ওখিদিরপুর গ্রাম থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে দোগাছি গ্রামের দক্ষিণ পাড়া বদ্ধ ভূিমতে নির্বিচারে গুলিকরে হত্যা করে । তাদের আপরাধ, তারা স্বাধীনতা চেয়েছিল । হানাদারের সেই নির্মম নিষ্ঠুররতায় মায়ের কোলের শিশুটি যেন কাঁদতে ভুলে গিযেছিল । ৫৩ জন তরতাজা মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল দোগাছি গ্রাম । তাঁদের এই আত্নহুতি বৃথা যায়নি । মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এদের নাম স্বর্নাক্ষরে লিখা থাকবে ।

১। আবুল কাসেম (৫২) পিতা সাহেব উল্লাহ মাষ্টার । ২। জহির উদ্দিন (৫০) পিতা নায়েব মুন্সি । ৩। নাছির মুন্সি (১৮) পিতা জহির মুন্সি । ৪। গগন মুন্সি (৪০) পিতা নায়েব মুন্সি । ৫। রাজ্জাক সোনার (১৮) পিতা আমেজ সোনার ৬। শমসের মুন্সি পিতা অজ্ঞাত ৭্ কোয়াজ সরদার (২৭) পিতা দশরত সরদার ৮। কুসা ঠিকাদার (৩৭) পিতা কালু ঠিকাদার ৯। আয়েজ সরদার (৪৫) পিতা ইনতুল্যা সরদার ১০। রহমান মৃধা পিতা ছহির মৃধা ১১। কামেজ সোনার (৩৫) পিতা অজ্ঞাত ১২। কবির সোনার (৪০) পিতা আরব সোনার ১৩। যদু সরকার পিতা উমরদি সরকার ১৪। বেলায়েত হোসেন (৪৫) পিতা আয়চান ১৫। হাবিল প্রামানিক (৪৮) পিতা কাদিল প্রামানিক ১৬। মোজাম্মেল প্রামানিক (১৮) পিতা অজ্ঞাত ১৭। জব্বার প্রামানিক (২৫) পিতা অজ্ঞাত ১৮। দিলার প্রামানিক(২৫) পিতা হাফেজ উদ্দিন প্রামানিক ১৯। ফুলচাঁদ (৫০) পিতা হাজী এলেমান ২০। রওশন আলী (৪৫) পিতা ভবন শাহ ২১। মেহের আলী (৪৮) পিতা আলেদ শাহ ২২্। ময়েজ প্রামানিক (৪৮) পিতা কালু প্রামানিক ২৩। আয়েজ উদ্দিন (৩৫) পিতা নায়েব উল্লাহ সোনার ২৪। আনছার প্রামানিক (২৮) পিতা বছির উদ্দিন প্রামানিক ২৫। আয়েন উদ্দিন প্রামানিক (৩৩) পিতা ময়েজ প্রামানিক সর্ব সাকিন খিদিরপুর । ২৬। শমছুল হক (১৪) পিতা অজ্ঞাত ২৭। ইউনূস আলী পিতা অজ্ঞাত ২৮। ফুরান সাহানা (৫০) পিতা অজ্ঞাত ২৯। চেরা প্রামানিক পিতা অজ্ঞাত ৩০। রশিদ তালুকদার (৪৫) পিতা অজ্ঞাত ৩১। আয়চাঁদ (৪৫) পিতা বছির উদ্দিন ঠিকাদার সর্ব সাকিন পিরোজপুর নওগাঁ । ৩২। আব্দুস সামাদ পিতা অজ্ঞাত ৩৩। জিতাই শেখ পিতা অজ্ঞাত ৩৪। জবির উদ্দিন খন্দকার পিতা অজ্ঞাত ৩৫। জবির উদ্দিন খন্দকরের স্ত্রী ৩৬। লবনা মন্ডল পিতা মন্দির মন্ডল ৩৭। ইয়াকুব আলী সরদার পিতা মঈন সরদার ৩৮। মঈন সরদার পিতা অজ্ঞাত ৩৯। সাগর মন্ডল ৪০। ছায়েব আলী মন্ডল পিতা মৃত হজ মন্ডল ৪১। কছির উদ্দিন মৃধা পিতা সামা মৃধা ৪২। মহির উদ্দিন মৃধা ৪৩। মকবুল সরদার পিতা মৃত হাসিব সরদার ৪৪। কাছের আলী প্রামানিক পিতা অজ্ঞাত ৪৫। সম প্রামানিক ৪৬। নসীর উদ্দিনের স্ত্রী ৪৭। অছিম উদ্দিন মৃধা ৪৮। হাসমত আলী পিতা অছিম উদ্দিন মিস্ত্রি ৪৯। চাঁন্দ ৫০। আব্বাছ মোল্লা ৫১। আনছার আলী মোল্লা ৫২। আক্কাস আলী শেখ ৫৩। বনিজ উদ্দিন পিতা মৃত মোসলেম উদ্দিন মন্ডল এদের সকলের দোগাছী ও বগুড়া জেলার সান-াহার পৌরসভার কলশা গ্রামের অধিবাসী। বাংলাদেশ মুক্তি যোদ্ধা সংসদ নওগাঁ জেলা কমান্ড এই বদ্ধ ভূমিতে শহীদদের স্বরণে নাম ফলক উম্মেচনের কাজ সমাপ্ত করেছে। যে কোন সময় তা আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বেধন করা হবে।

আতাইকুলা বদ্ধভূমি ২৫ এপ্রিল ১৯৭১

নওগাঁ শহরের দক্ষিনে ১৬ কিলোমিটার দূরে ছোট যমুনা নদীর পশ্চিমে প্রানে-র কোল ঘেঁষে আতাইকুলা গ্রাম। রানীনগর থানার অধীনে মিরাট ইউনিয়নের অন-ভূক্ত গ্রামটি মূলতঃ হিন্দু প্রধান। এখানে হানাদার বাহিনী নৃশংস হত্যাকান্ড চালায়। ৫২ ব্যক্তির তাজা রক্তে রজ্জিত হয়েছিল সবুজ প্রান-র । দিনটি ছিল ২৫ এপ্রিল ১৯৭১ ইং বাংলা ১১ ই বৈশাখ রবিবার। পাক হানাদার সকাল ৮ টায় নৌকাযোগে নদী পার হয়ে আতাইকুলা হিন্দু পাড়া চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । স‘ানীয় রাজাকারদের সহায়তায় দু, ঘন্টা ধরে লুটপাট অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন চালায় । পুরুষদের ধরে এনে প্রথমে তাঁদের জনকল্যান হাইস্কুল মাঠে নদীর পাড়ে দারিয়ে রাখে। পরে তাদের কে যোগেন্দ্রনাথ পালের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তিনটি লাইনে ৬০ জন মানুষকে দাঁড় করানো হয় গুলি করে হত্যা করার জন্য। এ সময় আতাইকুলার হাইস্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক রঞ্জনকুমার সাহাকে দৌড়ে পালিয়ে যাবার সময় গুলি চালালে তিনি সৌভাগ্য ক্রমে প্রাণে বেঁচে যান। পুকুরে কচুরিপানা মাথায় নিয়ে লুকিয়ে থাকার সময় শিবেশ্বর গূত্রগরকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভাদুপালাকে রাস-ায় হত্যা করে যোহেন্দ্রনাথ পালের বাড়িতে প্রথমে হানাদাররা সুরেশ্বর ও লক্কেশ্বর নামে ২ জন বয়ঃজোষ্ঠকে সকেলের চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করে। এরপর হানাদাররা মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে নির্মম ভাবে তাদেরকে হত্যা করে । ব্রাশফায়ারের মাঝেও এরপর ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যান প্রদ্যুতপাল, ভবেশ্বর পাল, নিধিরণ পাল, গিরেনচন্দ্রপাল, মলির্ন্দ পাল, নিপেনচন্দ্র পাল ও সাধান চন্দ্র পাল। পাক হানাদাররা যাবার সময় খেয়া নৌকার মাঝি রঘুবীর ও তার যুবক ছেলে দিরিঙ্গিঁকে নৌকাতে গুলি করে হত্যা করে পারাপারের ঋণ শোধ করে । হানাদাররা চলে যাবার পর গুলিতে বেঁচে যাওয়া ও পালিয়ে থাকার লোকজন গ্রামে ফিরতে শুরু করে। তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছিল পরের দিন ২৬ এপ্রিল, সোমবার ভবেশ্বর পালের নেতৃত্বে গোলক প্রামানিক এবং আরও কয়েক জনের সহয়োগিতায় শ্রী যোগেন্দ্র নাথ পালের বাড়ির পশ্চিম দিকে একটি বড় গর্ত খুরে ৫২ জন শহীদকে গনকবর দেয়া হয়। এই গণ কবরে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন –

১। যোগেন্দ্র পাল, ২। সতীশ চন্দ্র পাল, ৩। সুরেশ্বর পাল, ৪। লস্কর পাল, ৫। বলরাম পাল, ৬। শ্রী দাস পাল, ৭। গোবিন্দ চরন পাল, ৮। সুশান- কুমার পাল, ৯। প্রশান- কুমার পাল, ১০। বিদ্যুৎ কুমার পাল, ১১। বীরেন্দ্র নাথ পাল, ১২। সুধীর চন্দ্র পাল, ১৩। উত্তম কুমার পাল (বেতার শিল্পী), ১৪,। শল্কর পাল, ১৫। প্রফুল্ল কুমার পাল, ১৬। ডাঃ প্রমথ নাথ পাল, ১৭। বীরেন্দ্র সাথ পাল, ১৮। নারায়ন চন্দ্র পাল, ১৯। শচীন্দ্র নাথ পাল, ২০। রশিক চরন পাল, ২১। শশি চরন পাল, ২২। মোহন কুমার পাল, ২৩। সুধীর চন্দ্র পাল, ২৪। সুনিল চন্দ্র পাল, ২৫। যগেন্দ্র নাথ পাল, ২৬। বাদল নাথ পাল, ২৭। ভাদু চরন পাল, ২৮। সুধীর চন্দ্র পাল, ২৯। নিবারন চন্দ্র পাল, ৩০। তাল পাল, ৩১। নারায়ন চন্দ্র পাল, ৩২। বিশু চরন পাল ৩৩। দানু পাল, ৩৪। নরেন্দ্র নাথ পাল, ৩৫। নিখিল কুমার পাল, ৩৬। সিঙ্গেশ্বর সূত্রধর, ৩৭। সমেশ্বর সূত্রধর, ৩৮। সিবেশ্বর সূত্রধর, ৩৯। বিক্ষয় সূত্রধর, ৪০। রাম চন্দ্র সূত্রধর, ৪১। চৈকন্য সূত্রধর, ৪২। সুকমল সাহা, ৪৩। ধরেন্দ্র নাথ সরকার, ৪৪। মংলা সরকার, ৪৫। সচীন্দ্র নাথ সরকার, ৪৬। সুধীর সরকার, ৪৭। রশিক হালদার, ৪৮। বিরেশ্বর হালদার, ৪৯। রঘুবীর মাঝি, ৫০। ফিরিঙ্গিঁ, ৫১। প্রেম চরন পাল, এবং ৫২। রাজেন্দ্র নাথ পাল। ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাক হানাদার বাহিনী আতাইকুলা গ্রামে দ্বিতীয় বার হামলা চালিয়ে নারী নির্যাতন, লুটপাট, হিন্দু- মুসলমান নির্বেশেষ যাকে যেখানে পেয়েছে, তাকে সেখানেই হত্যা করেছে। হানাদাররা এ সময় কুজাইল গ্রামের ভবেন, বিশ্বনাথ, খোকা, বিশুসাহা, আতাইকুলা গ্রামের রেনু পাল, নিবারন পাল, আমজাদ হোসেন, পানু, সর্বরাম পুরের মহির উদ্দিন, কাশিম পুর গ্রামের হরেন চন্দ্র, শফির উদ্দিন, কছিম উদ্দিন, লছিমুদ্দিন ও কুজাইল গ্রামের গনেশ চন্দ্রকে গুলি করে হত্যা করে। এই ১৪ জনের মৃতদেহ নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সৎকার ও দাফন করে। এই ঘটনার দু, সপ্তাহ পরে আতাইকুলা গ্রামে হানাদাররা তৃতীয় দফায় হামলা চালায়। এ সময় গ্রামে কোন লোকজন না থাকায় তারা ফিরে যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ আতাইকুলা বদ্ধভূমি ছিল অবহেলিত।

২৬ বৎসর পর নওগাঁ নাটোর এলাকার এম.পি শাহিন মনোয়ারা হক জাতীয় সংসদে আতাইকুলা গ্রামের গনহত্যার ঘটনা জাতীয় সংসদকে অবহিত করেন। এতে সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ১৯৯৭ সালের ১ লা অক্টোবর আতাইকুলা বদ্ধভূমিতে শহীদের স্মৃতিস‘ুপে আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস-র স‘াপন করেন। এম. পি শাহিন মনোয়ারা হক। ভিত্তিপ্রস-র স‘াপনের র্সত্রধরে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ২৫ এপ্রিল ১৯৯৮ ইং বাংলা ১১ ই বৈশাখ ১৪০৫ বঙ্গাঁব্দ এম.পি শাহিন মনোয়ারা হক ২৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতি স-ম্ভের আনুষ্ঠানিক ফলক উন্মোচন করেন।

বান্দাইখাড়া বদ্ধভূমিঃ


গনহত্যা – ১। নওগাঁ শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিনে এবং আত্রাই থানা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে অবসি‘ত বান্দাইখাড়া আত্রাই থানার অনর্-গত একটি প্রাচীন সমৃদ্ধ গ্রাম। বাংলা ১৩৭৮ সন, ২২ শে আষাঢ় ৭ জুলাই ১৯৭১ খ্রিঃ, বুধবার, সকাল ৪ টার দিকে বড় নৌকায় ৬০ জনের মত পাকিস-ানি হানাদারদের একটি দল আত্রাই নদী পথে এসে বান্দাইখাড়া ঘাটে নামে। সাথে তাদের ৪ -৫ জন অবাঙালী এবং সে সময় আত্রাই অঞ্চলে ত্রাস সৃষ্টি কারি কুখ্যাত রাজাকার হানুর নেতৃত্বে জন্য ২৫ রাজাকার । গ্রামবাসিদের মধ্যে পাক হানাদারদের উপসি‘তি টের পেল, তারা গ্রাম ছেড়ে পালাল ইতি মধ্য হানাদার বাহিনী চর্তুদিকে ছড়িয়ে পরে গুলি চালাতে শুরু করে। হিন্দু – মুসলমান নির্বিশেষে বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের শ্লীলতাহীন এবং নগদ টাকা ও স্বর্নলংকার লুট করতে শুরেু করে। প্রথমে তারা রাধা গবিন্দ সাহাকে গুলি করে হত্যা করে ২। অহিভূষন সাহা (৬৫) নওগাঁ করোনেশন স্কুলের আবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ৩। ফটিক চন্দ্র সাহা ওরফে ফরিংগা (৪৮) ৪।মদন সাহা (৩২) ৫। রোহিনীকান- সাহা ওরফে কালিচরন সাহা (৫২) ৬। মনীন্দ্রনাথ সাহা (২৮) ৭। হানাদাররা এই ভাবে যাকে পাচ্ছিল গুলি করছিল অথবা আটক করছিল । আটককৃত জন্য হানা চল্লিশ গ্রামবাসী মুসলমান ও পঁচজন হিন্দুকে নিয়ে দুপুর ১২ টায় তারা বান্দাইখাড়া বাজারে এসে উপসি‘ত হয়। তারা আটক কৃত ৭। ক্ষিতিশ চন্দ্র সাহা (৪০), ৮। শশী সাহা (২৫) কে গুলি করে হত্যা করে এবং বাদ বাঁকিদের ছেড়ে দিয়ে লুণ্ঠিত বিপুল সম্পদ নৌকা বোঝাই করে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

বান্দাইখাড়া বদ্ধভূমি,

গনহত্যা – ২। বান্দাইখাড়া গ্রামে তখন কেবল মুসলমানদের বাস, কোন কোন হিন্দু বাড়িতে দুই এক জন পুরুষ সদস্য থাকে কিনা সন্দেহ। নারী ধর্ষনের অপমান ও সম্পদ লুন্ঠনের বেদনা ভুলে গ্রামে নতুন করে জীবন শুরু করার আয়োজন চলছে। এমন সময় এল ভয়াল অভিজ্ঞতার আর একটি দিন। ১৯ শে সেপ্টম্বর ১৯৭১ খ্রিঃ ২রা আশ্বিন ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ। রবিবার সকালের দিকে আগের মত রাজাকার জানুর নেতৃত্বে ৩৪ জন রাজাকার ৫/৬ জন অবাঙ্গালি এবং প্রায় ৭০ জন পাকিস-ানি সন্যের একটি দল বড় বড় নৌকা নিয়ে উত্তরে নদী এবং দক্ষিনে বিল এর দুই দিক থেকে এসে গ্রাম ঘেরাও করে আক্রমন শুরু করে। আগের মত চলছে গুলি নারী ধর্ষন ও লুটপাট। প্রাথক্যোর মধ্য এবার নতুন উপসর্গ হিসাবে গ্রামের ঘরে ঘরে অগ্নি সংযোগ । পথ চলতে সামনে পড়ে গেলেন প্রায় ৬০ বৎসরের বৃদ্ধ জোতদার মীর নূরল ইসলাম। সৈন্যরা তাকে গাছে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে, একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে ছিলেন মহির চন্দ্র সাহার পুত্র রঘুনাথ সাহা (৪০) গুলিতে সেখানে নিহত হলেন তিনি, গ্রাম ঘেরাও করে হানাদাররা ইতোমধ্যে ৩৫/৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে, আগুন লাগিয়ে পুরিয়ে গিয়াছে অন-ত ঃ ৩০ খানা বাড়ি, ১০ টি দোকান ও সরকারি ডাকঘরটি। বনিন্দদের নিয়ে তারা এগিয়ে গেল বান্দাইখাড়া বাজারের পার্শ্ববর্তি একটা খালের ধারে। এবার লোকগুলোকে খালের ধারে অর্ধবৃত্তারে বসিয়ে দেই তারা । তারপর ব্রাশ ফায়ার । মারা গেলেন নিরিহ তর তাজা মানুষ। রক্তে লাল হয়ে গেল খালের পানি। ওদের মধ্যে জন বেচে যান। নিহিতদের তালিকা নিম্নরুপঃ

১। গোলজার আলী সরদার (৪৯), ২। মোহাম্মদ আলী সরদার (৩৫), ৩। ওসমান আলী প্রামানিক (৪৫), ৪। আকবর আলী সরদার (৪২), ৫। গফুর মন্ডল (২৪), ৬। তালেব আলী (২৫), ৭। নায়েব আলী (৫০), ৮। আজিজার রহমান (৫৬), ৯। ময়েন সরদার (২৭), ১০। মকছেদ কাজী (৬০), ১১। তবেজ কাজী (৪০), ১২। শুটকি (৫৮), ১৩। আলা বক্‌্র (২৫), ১৪। জাহার আলী সরদার (২৯), ১৫। কছির সরদার (৫৫), ১৬। মমিন প্রামানিক (৪৫), ১৭। হাছেন আলী (৪৫), ১৮। রইছ সরদার (২২), ১৯। নূরল ইসলাম মীর (৬০), ২০। এসাহাক আলী (৬০), ২১। এসাহাক আলী সরদার (৩২), ২২। রঘুনাথ সাহা (৪০), ২৩। লেবু সরদার (১৮), ২৪। বুলু সরদার (২০), ২৫। স্বপন (১৭), ২৬। জাহেদ আলী (৩৭), ২৭। আজিজার রহমান (৫২), ২৮। বিনয় সিং (২৮)। নিহিত হিন্দুদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। তবে মুসলমানদের লাশ গুলি আত্নীয় স্বজনদের যারা পেরেছে কোন মত মাটি চাপা দিয়ে রাখে। বান্দাইখাড়া গ্রামে দু‘ দশা গনহত্যায় সিহিতদের সংখ্যা নিয়ে কিছুটা বিভ্রানি- রয়েছে। আবার গ্রাম বাসিও স্বজনদের কান্নআর রোল ওঠে। অনুসন্ধানে জানা যায়। তাদের মধ্যে তখনও ৪ জন জীবিত। দ্রুত তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতের হাসপাতালে । বেঁচে যাওয়া ৪ জনের মধ্যে আরও ২ জন সেই গ্রামের ইতিহাস বহন করে বেঁচে আছে। ফুলদতপুর গ্রামের সেই গন কবরে যে ১৪ জন .মহীদ বীর নিদ্রায় শাহিত তাদের ১৩ জন ফুলদতপুর এবং ১জন কে গ্রামের বাসিন্ধা। এরা হলেন ফুলদতপুর গ্রামের ১। আমজাদ মেম্বার (৩০), ২। হোসেন আলী (২৫), ৩। মোঃ তজে মিঞা (২৩), ৪। অবির উদ্দিন (২২), ৫। ছায়েদ উদ্দিন (৩৫), ৬। অছিমুদ্দিন (৩০), ৭। মতিয়ার রহমান (৩০), ৮। আফছার আলী (৩০), ৯। পাশ্ববর্তী গ্রামের রহিম উদ্দিন (৩০), ১০। আব্বাছ আলী (৫৫), ১১। ফয়জুল (৩০), ১২। জমির উদ্দিন (৫৫), ১৩। বিজু (২০), এবং ১৪। একজনের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। স্কুলের পুকুর পাড়ে তাদের গনকবর দেওয়া হয়। ঐ স‘ানটি দিন দিন ভেঙ্গেঁ পুকুরের সাথে মিশে যাচ্ছে। নিশ্চিহ্ন হবৱ পথে আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে আত্নহুতি দেওয়া মানৃুষগুলো শেষ স‘ান। এই ৩৬ বৎসরে নূন্যতম মুল্যায়ন করা হয়নি তাঁদের প্রতি। শেষ সম্মান টুকু জানাতে সমাধির স‘ল টুকু পর্যন- বাড়িয়ে দেওয়ার উপলব্ধি ও হয়নি কারও মধ্যে।

ধামুইরহাট বদ্ধভূমি।


নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৪৮কিলোমিটার দূরে সীমান-বর্তী ধামুইরহাট থানার সন্নিকটে জয়পুরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিম বঁঙ্গ প্রদেশ । ধামুইরহাট থানার কুলফুতপুর গ্রামের বদ্ধভূমি। স্বাধীনতার ৩৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন অবদি তা অবহেলিত এবং প্রসাশনের সহানুভূতি দৃষ্টির আরালে রয়ে গেছে। সেখানে শায়িত ১৪ জন শহীদের সমাধিস‘ল এখন শধুই গো চারন ভূমি। এই প্রজন্মের সন-ানেরা জানেই না যে, ১৯৭১ এর পটভূমিকায় এখানে লুকিয়ে রয়েছে মহান মুক্তি যুদ্ধের এক করুন কাহিনী , তাঁদের পরিবার পরিজন, আত্নীয় স্বজনদের আহাজারি আজও বাতাসে গুমরে মরছে । কিন‘ু তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে অধ্যবধি কোন মহল এগিয়ে আসেনি । ১৯৭১ সালের ১৫ জুলাই খানা সদর থেকে মাত্র (৭) কিলোমিটার দূরে কুলদতপুর , গ্রামের মানুষ মাঠে নেমেছিল গৃহস‘ালি কাজের জন্য। জমি চাষ, বীজ বোনা,ধান গড়া ইত্যাদি কাজ করছিল কৃষকেরা। এমন সময় পাকিস‘ানি হানাদারদের একটি দল। কুলফতপুর গ্রামটি ভারতের সীমানে-র মাত্র দুশো মিটারের মধ্যে। মুক্তি বাহিনীর সন্ধ্যনে ব্যস- ব্যাকুল হানাদারদের তাই প্রখর দৃষ্টি ছিল এই গ্রামের ওপর। হানাদাররা ঐ দিন সোমবার দুপুর একটার দিকে মাঠ থেকে ১৮ জন কৃষককে কুলফতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জড়ো করে। জানতে চায় মুক্তি বাহিনীর খবর । ব্যর্থ হয়ে চালাতে থাকে নানা আত্যাচার । বুটের লাথি বেয়োনেটের আঘাত তার পরও কোন ফল না হলে ১৮ জনকে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড় করানো হয়। এক পর্যায়ে সারিবদ্ধ ১৮ জনের উদ্দেশ্যে হানাদারদের অনেক গুলো অস্ত্র এক সাথে গর্জে ওঠে। তাদের আর্ত চিৎকারে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে আকাশ বাতাস লুটিয়ে পড়ে সবাই । রক্তে রঞ্জিত হয় স্কুলের সবুজ চত্বর । আরাল থেকে গ্রামবাসী সবকিছু দেখলেও কিছুই করার থাকে না করো । প্রায় ৪ ঘন্টা কেটে যায়। দুঃখ ভরাক্রান- সূর্যটা তখন পশ্চিমা আকাশে লুটিয়ে পড়েছে। হানাদাররা চলে গেলে গ্রাম বাসী ছুটে যায় ঘটনা স‘লে। ১৮ জন শহীদকে গ্রামবাসী রাস-া সংলগ্ন ভিটাতে কবর দেন পাক বাহিনী চলেযাবার পরে। দীর্ঘদিন অবহেলিত যাবার পর গত ২০০২ সালে স‘ানিয় এম.পি জনাব সামসুজ্জোহা খাঁন।

মান্দা পাকুরিয়া বদ্ধভূমি।

নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা থানা । এ থানার উত্তরে মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুর থানা । দক্ষিনে রাজশাহীর বাগমারা ও মোহনপুর থানা। পূর্বে নওগাঁ সদর, আত্রাই ও রানীনগর থানা। পশ্চিমে তানোর থানা। শান্দা থানার ১ নং ভারশোঁ ইউনিয়নের অনর্-গত পাকুরিয়া গ্রাম। ২৮ আগষ্ঠ ১৯৭১ খ্রীঃ ১১ ভাদ্র ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ, শনিবার । শতাব্দীর ভয়াবহ নৃশংস হত্যাকান্ড সংঘটিত হয় পাকুরিয়া বদ্ধভূমিতে। এখানে হানাদাররা ৭৩ জন নিরপরাধ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে । এক সমীক্ষায় জানা যায় যে, নওগাঁতে যত গুলো বদ্ধভূমি রয়েছে । তার মধ্যে পাকুরিয়া বদ্ধভূমি অন্যতম। এখানে মৃতের সংখ্যা সবচাইতে বেশী । ঘটনার দিন রাজাকারদের সহযোগীতায় পাক হানাদার বাহিনী সকালে চারদিক থেকে পাকুরিয়া গ্রাম ঘেরাও করে আক্রমন শুরু করে । এর ফলে হানাদারদের হাত থেকে অবাল, বৃদ্ধ, বনিতা কেউই বাদ যায়নি। শুরু হয় বাড়িতে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ও নারী নির্যাতন। হনাদাররা ৯২ জন মনুষকে পাকুরিয়া হাই স্কুলের মাঠে জরো করে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে।হানাদাররা চলে যাবার পরে লশের স‘পের মধ্যে থেকে ১৯ আহত অবস‘ায় বেঁচে ফিরে আসে।

শহীদের তালিকা যথাক্রমে

১। নাছির উদ্দিন প্রামানিক ২। সাব্বির সরদার ৩। বায়েজ উদ্দিন মন্ডল ৪। জেককার আলী মন্ডল ৫।মাসলেম আলী মন্ডল ৬।ইসমাইল হোসেন ৭। পিয়ারবক্স প্রামানিক ৮। মহির সরদার ৯। আককাছ আলী সরদার ১০। নাজিম উদ্দিন ১১। ফয়েজ চৌকিদার ১২। কেমতুল্যা ১৩। মঞ্জিলা সরদার ১৪। চিনোদ আলী শাহ ১৫। মোসলেম আলী মন্ডল ১৬। নজরুল ইসলাম শাহ ১৭। ঝড়- মন্ডল ১৮। পবন মন্ডল ১৯। রহির মোল্লা ২০। আবেদ অলী মোল্লা ২১। আহেজ আলী মোল্লা ২২। সুরজ আলী মন্ডল ২৩। বাছের আলী মন্ডল ২৪। ইমাম আলী মোল্লা ২৫। আব্দুর রহমান পাইক ২৬। হজরত আলী মোল্লা ২৭। তঞ্জেব আলী মোল্লা ২৮। মহির উদ্দিন মোল্লা ২৯। মোবারক আলী মোল্লা ৩০। মেহের আলী সুতার ৩১। আরব আলী মন্ডল ৩২। তালেব আলী প্রামানিক ৩৩। বারু মোল্লা ৩৪। জমির উদ্দিন মোল্লা ৩৫। ছাহের আলী মোল্লা ৩৬। চৈতা মোল্লা ৩৭। ইন-া রহমান প্রািমানিক ৩৮। কদম মোল্লা ৩৯। আদম মোল্ল ৪০। বজের আলী মোল্লা ৪১। বশথরতুল্যা প্রামানিক ৪২। মজিবর রহমান প্রামানিক ৪৩। ইসমাইল হোসেন ৪৪। নেপুর মোল্লা ৪৫। দশো মোল্লা ৪৬। দরাজ আলী প্রামানিক ৪৭। তছির মোল্লা ৪৮।খোদাবক্স ৪৯। মাদার বক্স ৫০। ভাদু মোল্লা ৫১। হাফেজ উদ্দিন মোল্লা ৫২। তালেব আলী ৫৩। লবির দেওয়ান ৫৪। তমিজ উদ্দিন দেওয়ান ৫৫। লজের আলী ৫৬।লোকমান আলী ৫৭। পিয়ার বক্স মন্ডল ৫৮। বাদল মন্ডল ৫৯। বজের পাথর ৬০। পফুল্ল দেওয়ান ৬১। আব্দুল হামিদ ৬২। ওসমান আলী ৬৩। নূরউদ্দিন ৬৪। মোসলেম উদ্দিন ৬৫। মাহতাব আলী ৬৬।বুদুশাহ ৬৭। বুলন বেওয়া (পুরা) ৬৮। কুড়ান মোল্লা ৬৯। মছির প্রামানিক ৭০। রিয়াজ মন্ডল ৭১। ইয়াদ আলী করাতী ৭২। খছের আলী ৭৩। লজের আলী শাহ -এরা সকলেই হানাদারদের গুলিতে শহীদ হন। বধ্যভূমির পাশে এদেরকে সমাহিত করা হয়। আহতদের তালিকা নিম্নরুপঃ ১। শমশের প্রামানিক ২। হেদায়েতুল্লা ৩। মমতাজ উদ্দিন ৪। ছাবেদ আলী ৫। জোনাব আলী ৬। হাছেন আলী ৭। আশরাফুল ইসলাম ৮। আফছার আলী ৯। আদমল হোসেন ১০। আজিজুর রহমান ১১। ইমাম আলী ১২। ইনায়েত ১৩। মেরু মোল্লা শাহ ১৪। আকন্দ ১৫। কছের ১৬। নসরতুল্লা মিঞা ১৭। মহব্বতুল্লা ১৮। নাছের আলী ১৯। গাবু পাথর। স্বাধীনতা উত্তর পাকুরিয়া বধ্যভূমিটি সুন্দর ভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে। বধ্যভূমিতে প্রবেশ মুখে সুউচ্চ মেহেরাব আকৃতির ফটক নির্মান করা হয়েছে। ফটকের দেয়ালে শ্বেত পাথরে খোদাই করে শহীদদের ও আহতদের নামের তালিকা সংরক্ষন করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয় মাঠে ভাষা শহীদদের স্মরনে সেখানে একটি শহীদ মিনার রয়েছে। মান্দার প্রাক্তন সংসদ সদস্য সামছূল আলম প্রামানিক এই বধ্যভূমির নাম ফলক ও শহীদ মিনার কিছুটা উন্নয়ন করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই স‘ান টাকে আরও মনোরম করার পরিকল্পা করেছেন।

পার বোয়ালিয়া গনহত্যা

৭ নভেম্বর ১৯৭১। পাক হানাদার, বিহারী সমপ্রদায়, রাজাকার ও ম্যালশিয়া বাহিনীর সমন্বয়ে নওগাঁ ও সান-াহার থেকে দ্বি-মুখী আক্রমন রচনা করে। জয় বাংলা হাট ও পার বোয়ালিয়া গ্রাম আক্রমন করে বেশ কিছু বে- সামরিক নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে । যাথাক্রমে ১। জগদেব প্রসাদ পিতা রাম প্রসাদ ২। ঝাড়- মন্ডল পিতা বাড়- মন্ডল ৩। দিলবর রহমান দিলু পিতা বা্বু মন্ডল ৪। মেহের শাহ পিতা লিফুজা শাহ ৫। হজিবর রহমান পিতা ফ্যালানা সরদার ৬। আজবুল সরদার পিতা মাদারী সরদার ৭। ছামছুল বাটু পিতা অহির স্বর্নকার ৮। কাদির সরদার পিতা বাজু সরদার ৯। আসাদুল পিতা মফিজ সরদার ১০। মজব সাহা পিতা কুশাই সাহা ১১। করিম উদ্দিন পিতা খুদি মন্ডল ১২। দিবর সরদার পিতা বাবু সরদার ১৩। ইশরদ মন্ডল পিতা কিসমত মন্ডল ১৪। মেহের আলী সাহা পিতা লিপুচা সাহা। এবং আহত হন যথাক্রমেঃ ১। উজির শাহ পিতা গছির শাহ ২। জসমত সখিদার পিতা অজ্ঞাত ৩। শফির স্বর্নকার পিতা বাদল স্বর্নকার অল্পের জন্য প্রানে বেঁচে যান সদ্য ভারত ফেরত মুক্তি যোদ্ধাদের চিকিৎসক বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক ডাঃ হাসান আলী এদের সর্ব সাকিন পার বোয়ালিয়া, জেলা নওগাঁ। পার- বোয়ালিয়া আক্রান- সংবাদ পেয়ে জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতেৃত্বে বীর মুক্তি যোদ্ধারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি আক্রমন রচনা করেন।সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন- -স‘ায়ী এ যদ্ধে কয়েকজন রাজাকার ও ১ জন মিলিশিয়া পুলিশ নিহত হন। যুদ্ধ শেষে গ্রামবাসী রাজাকার সহ মিলিশিয়া পুলিশের মৃত দেহ গ্রামের বাঁশ ঝারে পুতে দেয়। গত ২৯-০৪-০৮ তারিখে নওগাঁ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার এস,এম,সিরাজুল ইসলাম এর প্রচেষ্টায় নওগাঁর জেলা প্রশাশক মহদয় আনুষ্ঠানিক ভাবে ৪৩ জন শহীদের নাম ফলক উন্মোচন করেন।

খাগরকুড়ী গ্রামে গনহত্যা,৭১

পার বোয়ালিয়া যুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধাদের সঙ্গেঁ হানাদার বাহিনী পরাস- হলে ক্ষোভে দুঃখে হানাদার বাহিনী -পার্শ্ববতী খাগর কুড়ি গ্রামের নিরীহ জনগনের উপর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। গ্রামে অগ্নি সংযোগ, লুটতরাজ, নারী নির্যাতন ও ব্যাপক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। হানাদার বাহিনী ১। পুলিন মন্ডল পিতা গানা মন্ডলকে ঘরে আগুন লাগিয়ে পুরিয়ে মারে ২। মোহাম্মাদ মন্ডল পিতা শুজা মন্ডলকে গুলি করে এবং ৩। গুলজার বিবির স্বামী মঙ্গঁলা মন্ডলকে কুড়ালি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে ৪। বাদেশ আলী পিতা রমজান আলী মন্ডল ৫। মদের আলী মন্ডল পিতা ওহির মন্ডলকে জবাই করে হত্যা করে। সূর্যাসে-র পূর্বে পাক – হানাদার বাহিনী ৬। খাতেযান বিবি স্বামী বাদেশ আলী মন্ডল ৭। ফাতেমা বিবি স্বামী শুকুর আলী মন্ডল ৮। করিম মন্ডল পিতা খুদা মন্ডল ৯। মান্নান পিতা বাদেশ মন্ডল ১০। গুলিজান স্বামী মংলা মন্ডল ১১। আছিরন স্বামী ময়েন মন্ডল সর্ব সাকিন খাঁগর কুড়ি ১২। অনোয়ার পিতা অহির ড্রুাইভার ১৩। আমেনা বেওয়া স্বামী মফিজ উদ্দিন ১৪। ফয়জান স্বসিী হাফিজ উদ্দিন ১৫। বুলমুন বেওয়া স্বামী চুনাই ফকির ১৬। তছির উদ্দিন পিতা হাফেজ উদ্দিন সর্ব সাকিন এনায়েতপুর ১৭। মেহের আলী মন্ডল পিতা মটু মন্ডল ১৮। মোজাম উদ্দিন পিতা বাদেশ আলী ১৯। বাদেশ সরদার পিতা আলী সরদার সাং বোয়ালিয়া ২০। এব্রাহিম পিতা রিয়াজ উদ্দন ২১। আহম্মদ আলী খাদ্দু মন্ডল ২২। কাদের সরদার পিতা নিয়ামত সরদার ২৩। অছির মন্ডল পিতা আরবুল্যা সর্ব সাকিন বর্শিপুর ২৪। মোহাম্মাদ আলী মন্ডল পিতা মধু মন্ডল ২৫। জামাল উদ্দিন পিতা ছায়ের মন্ডল ২৬। মোবার আলী পিতা কবেজ মন্ডল এদের সর্ব সাকিন বোয়ালিয়া উত্তর পাড়া। ২৭। চয়েন উদ্দিন পিতা আজু মন্ডল ২৮। মফিজ প্রামানিক পিতা ভোলা প্রামানিক ২৯। যাদব সরদার পিতা অঞ্জাত ৩০। কাবিল সরেদার পিতা অঞ্জাত এদের সর্ব সাকিন বোয়ালিয়া ৩১। জসমত পিতা অঞ্জাত ৩২। আলিম প্রামানিক পিতা অঞ্জাত এদের সর্ব সাকিন খাগড় কুড়ী জেলা নওগাঁকে গুলি করে হত্যা করে। এর পর ব্যাপক ধ্বংসযঞ্জ চালিয়ে হানাদার বাহিনী অবশেষে সান-াহারের উদ্দেশে গ্রাম ত্যাগ করে।

বদল গাছী গয়েশপুর গনহত্যা

২৭ আশ্বিন ১৩৭৮ বঙ্গাব্দ, ১৪ ই অক্টোবর ১৯৭১। বৃহস্পতিববার গ্রামে ঢুকেই হানাদার বাহিনী নির্বিচারে শুরু করে গনহত্যা। একই পরিবারের সাহাদত বরন করেন ১। সখিনা বিবি ২। পোষ্টম্যান আফজাল হোসেন চৌধুরী ৩। স্কুল শিক্ষক মখলেছার রহমান চৌধুরী ৪। এনামুল হক চৌধুরী ৫। আমিনুল হক চৌধুরী ৬। তলুরন নেছা ৭। রশিদা ৮। নূর মোহাম্মাদ সরদার (জামাল পুর) ৯। সামসাদ বেগম ১০। সামসুল আলম চৌধুরী ১১। এ্যাড্ ফারুক চৌধুরী শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে ১৮ অগ্রাহায়ন ১৪০৪ বঙ্গাঁব্দ ২ রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে আওআমী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জনাব আব্দুল জলিল গয়েশপুর শহীদের স্বরণে একটি নাম সম্মলিত প্রস-র ফলক স্খপন করে শহীদের আত্নদানকে ইতিহাসের পাতায় যোগ্যাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার যুদ্ধে ১৩ জন শহীদ।

নওগাঁ জেলার অধীনে বদলগাছী উপজেলা, উপজেলা সদর থেকে ৮ কিঃ মিঃ অদূরে ৭ম, ৮ম শতাব্দীতে স্বীতিয় সম্রাট মহিপাল কর্তৃক নির্মিত ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার। ইতিহাসে সোমপুর বিহার নামক ক্ষ্যাত। এই ঐতিহাসিক স‘ানে ১০ অক্টোবর ১৯৭১। দু দিক থেকে আনুমানিক দেড়শত পাকবাহিনী ও রাজাকার ভারী অন্ত্রে শন্ত্রে সজ্জিত হয়ে মুক্তি যোদ্ধাদেরকে ঘিরে ফেলে, মুক্তি যোদ্ধারা ছিল সংখ্যায় মাত্র ৩২ জন। এদের আধিনায়ক ছিলেন বীর মুক্তি যোদ্ধা ফজলুর রহমান। বেধে যায় প্রচন্ড যুদ্ধ। মুক্তি যোদ্ধারা ক্রমাগত ছয় ঘন্টা এ্যামবুস থেকে প্রচন্ড গুলি বিনিময়ের পর শক্রু বেষ্টীত হয়ে পরে। পেছন থেকে কোন কভারেজ ফায়ারিং না পাওয়ায় নিজের ছোড়া গ্রেনেট দিয়ে ৬ জন বীর মুক্তি যোদ্ধা শহীদ হন। যথাক্রমে ১। বীর মুক্তি যোদ্ধা ফজলুর রহমান ২। বীর মুক্তি যোদ্ধা শরিফ উদ্দিন ৩। বীর মুক্তি যোদ্ধা আব্দুল গনি ৪। বীর মুক্তি যোদ্ধা ফরিদ উদ্দীন (শান-াহার কলেজের ছাত্র) ৫। বীর মুক্তি যোদ্ধা আছির উদ্দিন প্রামানিক ৬। বীর মুক্তি যোদ্ধা আফজাল হোসেন। যুদ্ধ শেষে পাক হানাদার ও রাজাকার বাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে নিরিহ ৭ জন গ্রাম বাসীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে। ১। কাজেম সরদার (৫০) ২। আজিম উদ্দীন (৬০) ৩। কিনা মন্ডল (৬০) ৪। গিয়াস উদ্দিন (৪০) ৫। আক্কাস আলী (৫০) ৬। অজ্ঞাত ৭। অজ্ঞাত। ঐতিহাসিক পাহাড় পুরের কয়েকশ গজ দুরে ৬ জন বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরে শুধু তাদের নাম পাথরে লিখা রয়েছে। কিন‘ আজও শহীদ দের স্মরনে কোন স্মৃতি সৌধ্য গড়ে উঠে নি।

পত্নীতলা আদাবাসি বধ্যভূমি।

নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলায় রয়েছে আদিবাসিদের এক বধ্যভূমি, স্বাধীনতার ৩৭ বৎসরে ওই অবহেলিত বধ্যভূমির স্বৃতি রক্ষায় এ পর্যন- কেউ এগিয়ে আসেনি। এমন কি মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাসেও স‘ানীয় ও জাতীয় পর্যায় এই বধ্যভূমির নাম লিখা হয়েছে কি না এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। নওগাঁ জেলার একেবারে সীমান-বর্তী। সাপাহার উপজেলা সদর থেকে উত্তরে ৮ কিঃ মিঃ দূরে পন-ীতলা উপজেলার নিরমইল ইউনিয়নের হালিম নগর গ্রামে আদিবাসীদের এই বধ্যভূমি। স্বাদীনতার যুদ্ধে হালিম নগর ও আশে পাশের কোন গ্রামে কোন মুক্তি যোদ্ধা ছিলনা। ওই এলাকার প্রভাবশালীরা প্রায় সকলেই স্বাধীনতা বিরোধী। সংগত কারনেই ভারতে প্রশিক্ষন ফেরত মুক্তিযোদ্ধারা এলাকায় এলে কোন সাহায্য সহযোগীতা পেতনা। প্রভাবশালী মুসললীগ ও জামায়াত নেতাদের চোখ ফাকি দিয়ে আদাবাসীরাই মুক্তিযোদ্ধাদের সব রকম সাহয্য সহযোগীতা করতো। এটাই ছিল তাদের রড় অপরাধ। ২৭ নভেম্বর তৎকালিন নওগাঁ মহকুমার নিয়ামত পুর থানা প্রথম হানাদার মুক্ত হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে হানাদার বাহিনী প্রচন্ড মার খেয়ে পিছু হেটে এসে তারা নিরিহ জনসাধারনের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ীরে দেয়। নিজেদের পরাজয় অনুভব করে মরন কামর হানে। ২৭ নভেমরের ধারাবাহিকতার সূত্র ধরে রাজাকারদের সহযোগিতায় হানাদার বাহিনী ৩০ নভেম্বর ৩৭ জন আধিবাসীকে ধরে এনে হালিম পুর গ্রামের সন্নিকটে এই নির্জন স‘ানে সারিবদ্ধভাবে সাঁর করিয়ে ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে। হত্যাকারীরা পার্শ্ববর্তী হলাকান্দরে গ্রামের সইফুল,ইসলাম,আইনাল হক ও তারেককে দিয়ে লাশগুলো গর্ত খুরে পুতে রাখে। এই হত্যা কান্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সৈয়দ পুর গ্রামের আদিবাসী বুলু মরমু সাক্ষী হয়ে বেচে যায়। সেই সময় তার বয়স ১০/১২ বছর। তাকেও লাইনে দার করানো হয়েছিল। সৌভাগ্য ক্রমে সে বেঁচে যায়। এই বদ্ধভূমিতে ৩৬ জন শহীদ চীর নিদ্রায় শায়িত আছেন। এদের মধ্যে এলাকার পরিচিত ছিলেন ১৮ জন। এরা হলেন শহীদ ১। বুধু হেম্ব্রম, ২। সুকল হেম্ব্রম, ৩। সরকার মুরমু, ৪। বর্নাট সরেন, ৫। বুধু রায টুডু, ৬। চরকা টুডু,৭। টুডু মুরমু, ৮। মাথলা মুরমু, ৯। শুক্কুল মুরমুম, ১০। মুশাই মুরমু, ১১। রবিদাশ বর্মন, ১২। যাদু মুরমু, ১৩। ভুতু সরেন, ১৪। মুন্সি টুডু, ১৫। জোনা টুডু, ১৬। মাঝি সরেন, ১৭। বয়লা হাসদাা , ১৮। কারা সরেন। অপর ১৮ জন শহীদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। জানা গেছে এদের মধ্যে আদিবাসীদের বাড়ীতে আশ্রীত কয়জন মুক্তি যোদ্ধা ও দূর গ্রাম থেকে ধান কাটতে আসা কয়েকজন হতভাগ্য অজ্ঞাত ক্ষেত মজুরও ছিলেন। ২৫ এপ্রিল হৃদয় দাস (৪০) পিতা দীনবন্ধু দাস, সুলতান পুর, সেপ্টেম্বর মাসে চক এনায়েত পুর মহলা্লর আছির উদ্দিন (৫০) জাহানারা বেগম স্বামী হাসেম কাজী (পুলিশ) পার নওগাঁ মধ্য পাড়ায়, বঙ্গাঁবাড়ীয়া এলাকায় রিক্সা শ্রমিক ফরিদ উদ্দিনকে সে মাসে হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। অক্টোবর মাসে হাঁপানিয়া গ্রামের মুক্তি যোদ্ধা আব্দুস সামাদ দেশের জন্য প্যান বিসর্জন দেন। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে হাঁপানিয়া বাজারে প্রতিষ্ঠিত হয় শহীদ সামাদ প্রথমিক বিদ্যালয়। নভেম্বর মাসে জাফরাবাদ গ্রামের পাঁচ ব্যক্তিকে পাক বাহিনী হত্যা করে। যথাক্রমে ১। দিলবর মন্ডল ২। মিসেস দিলবর মন্ডল ৩। আদম মন্ডল ৪। ইছব মন্ডল ৫। অছির ফকির । নভেম্বরের শেষের দিকে মহাদেব পুর থানার চক আতিয়া গ্রামের কলেজের ছাত্র হামিদুর রহমান পিতা আব্দুল জব্বার মন্ডল ও পাবনা গ্রামের আফজাল হোসেনকে তারা হত্যা করে। ৩০ এপ্রিল মির্জা দীনব মোহাম্মাদ (বি,এ) পিতা ডাঃ মির্জা ইউসুফ আলী গ্রাম বোয়ালিয়াকে ধরে তিনজন অবাঙ্গালী সোবহান বিহারী রসস-ল্লি ও সালাউদ্দিন পার নওগাঁ মধ্য পাড়ায় তাকে জবাই করে হত্যা করে। পরে মির্জা দীন মোহাম্মাদের লাশ ৩২ টুকরা অবস‘ায় তার পরিবারবর্গ উদ্ধার করে। আগষ্ট মাসে সাহসী তরুন আইনজীবি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার ধামুইর হাট থানার র্ফাসি পাড়ায় পাঞ্জাবী ক্যাপ্টেন কাদরীর হাতে ধরা পড়ে নিহত তাঁর অপটর সঙ্গী সহ। ২১ আগষ্টের মধ্যে কোন একদিন তিনি শহীদ হন বলে জানা যায়। ১৫ অক্টোবর মোর জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে বদলগাছি থানার কোলা ভান্ডরপুর নামক স‘ানে সংগঠিত সম্মুখ যুদ্ধে দু,জন মুক্তি বাহিনী পাক হানাদারদের হাতে ধরা পড়লে তাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এদের নাম জানা সম্ভব হয়নি। ২৫ অক্টোবর মৈনম যুদ্ধে আহত অবস‘ায় ধরে মুক্তিযোদ্ধা কে,সি, আর সেলিম পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। পাক বাহিনী সেলিমকে জীপের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে জীপ চালিয়ে তাকে টেনে হেঁচড়ে হত্যা করে। ১৫ নভেম্বর ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মোর আব্দুল জলিল ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার যৌথভাবে চলমান যুদ্ধের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে গভীর ভাবে বিচার বিবেচনা করে তাদের রণ কৌশল পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সরাসরি ুুহানা আক্রমন ও দখল করার নির্দেশ দেন। পোরশা পত্নীতলা, ধামুইরহাট, বদলগাছি, নিয়ামতপুর, নওগাঁ সদর সহ। মান্দা, মহাদেবপুর, রানীনগর ও আত্রাই থানা আক্রমনের পরিকল্পনা নেয়া হয়। ২৭ নভেম্বর পূর্ব গৃহীত সিদ্ধানে-র অংশ হিসাবে নওগাঁ সদর থেকে ৩৩ মাইল দূরে নিয়ামতপুর থানায় ভোর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমন চালায়, বেশ কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ চলার পর রাজাকার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্নসর্ম্পন করে, অন্যরা পালিয়ে যায়। নওগাঁ্ জেলার নিয়ামতপুর খানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বাংলঅদেশের মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা থানার ভবন শীর্ষে উড়িয়েদেন। ৯ ডিসেম্বর ১৯৭১। আখতারুজ্জামান রঞ্জু ও হারুন-আল-রসিদের নেতৃত্বে মুক্কিযোদ্ধারা রানীনগর থানা আক্রমন করে প্রায় দু, দিন যুদ্ধ চলার পর ১০ ডিসেম্বর বিকেল ৫ টায় রানী নগর থানা হানাদার মুক্ত হয়। এ যুদ্ধে আব্দুল মালেক,ইলিয়াস হক, এবং কমিউনিষ্ট গেরিলা গ্রুপ অংশ গ্রহন করেন। যুদ্ধ শেষে ২৫৬/৩০ জন রাজাকার আত্ন সর্ম্পন করে এবং অসংখ্য বীরাঙ্গঁনা মেয়েকে মুক্তি যোদ্ধারা উদ্ধার করেন।

পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কক্ষ’-৭১

নওগাঁ লর্ড লিটন সেতুর পূবাংশে পার নওগাঁ সেতু সংলগ্ন উত্তর প্রানে- “ভবানী ভবন” নামে একটি দ্বিতল বাড়ি ছিল। বর্তমানে এটি শহীদ নূরন্নবী পৌর মার্কেট। এই বাড়িটি সড়ক জনপথ অধিদপ্তর ১৯৮৩ সালে ভেঙ্গেঁ ফেলে। এই ভবানী ভবনের ফ্রথম তালাকে পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা “ নির্যাতন সেল” হিসেবে ব্যাবহার করতো। স্বাধীনতার পর এই কক্ষে প্রচুর ঝুলন- দড়ি, ব্লেড, চেইন, ও দেয়ালে ফিনকি দেয়া রক্তের ছাপ রনওগাঁ বাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই কক্ষে গ্রাম থেকে যুবকদের ধরে এনে ঝুলিয়ে তাদের উপর ইচ্ছেমত অত্যাচার চালানো হত। পরে তাদেরকে হত্যা করে সেতুর উপর ওপর থেকে লাশ যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করা হতো। এই সকল লাসের সংখ্যা নিরুপন করা সম্ভব হয়নি।

পার নওগাঁ বধ্যভূমি

১৮ ডিসেম্ববর যে বধ্যভূমি গুলো নওগাঁ বাসী আবিস্কার করেছিল। সেখানে কোন পুরুষের লাশ ছিলনা। এখানে শুধু ১৪ বৎসর থেকে ৩০/৩৫ বৎসর বয়সের অগনিত মহিলার লাশ ছিল। পার-নওগাঁ পাটশালা বিদ্যালয় ছিল এই বধ্যভূমি। এখানে বড়সর পানির কূপ ছিল। মেয়েদের ধরে এনে এইকূপ সংলগ্ন একটি ঘরে হানাদাররা প্রথমে পর্যায় ক্রমে তাদেরকে ধর্ষন করত। এর পর তাদেরকে জবাই করে অথবা জীবন- অবস‘ায় হাত-পা বেঁধে এই কূপের মধ্যে নিক্ষেপ করে হত্যা করত। ঠিক এই রকমেরই আরেকটি মৃত্যুকূপ নওগাঁ পুরাতন জনতা ব্যাংকের পশ্চিম পার্শ্বে আবিস্কার করেছিল। তবে তার রুপ এতটা বীভৎস্য ছিল না। দুটি কূপ মিলে মৃতের সংখ্যা শতাধিক বলে অনেকে মনে করেন। এ ছাড়াও আরও কয়েক টি বধ্যভূমি পার নওগাঁয় অবিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে মরছুলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পূর্ব দিকে মৃত রউফ মিয়ার বাগানে ও পার – নওগাঁ মধ্য পাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতা মৃত ডাঃ হাসান আলীর বাড়ির পূর্ব – দক্ষিণ কোনে অবসি‘ত পরিত্যক্ত জমিতে অজস্র লাশ পাওয়া গিয়েছিল। এখন অবশ্য ঐ সব জায়গায় গড়ে উঠেছে জন বসতি।

থানা ভিত্তিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা।

নওগাঁ জেলার মুক্তি পাগল যুবকেরা স্বাধীনতার আশায় বিভিন্ন রনাঙ্গঁনে সাহসীকতার সাথে যুদ্ধে অবতীর্ন হন। যুদ্ধে বেশ কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন। থানা ভিত্তিক শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা নিম্নে তুলে ধরছি।

নওগাঁ সদর থানা

১। শহীদ আজিজুর রহমান পিতা রিয়াজ উদ্দিন দেওয়ান, গ্রাম মোক্তার পাড়া, বক্তার পুর ইউনিয়ন ২। শহীদ আব্দুর রহমান পিতা মৃত রিপন সরদার, গ্রাম ও ইউনিয়ন বর্ষাইল ৩। শহীদ বাগের আলী পিতা মৃত ফরতুল সরদার, গ্রাম ও ইউনিয়ন বক্তার পুর ৪। শহীদ মোস-ফা কামাল পিতা মৃত লফিজ উদ্দিন কামাল, গ্রাম ও ইউপি উলিপুর ৫। শহীদ সৈয়দ আলী পিতা মৃত আছির মন্ডল গ্রাম তাজনগর ইউপি তিলকপুর ৬। শহীদ মতিউল ইসলাম পিতা আশাদুল ইসলাম, গ্রাম ইকিল পাড়া নওগাঁ পৌরসভা ৭। শহীদ লুৎফর রহমান পিতা হাজী রমজান আলী গ্রাম গাংজোয়ান ইউপি চন্ডিপুর ৮। শহীদ এছহাক আলী পিতা মৃত জমিন উদ্দিন খাঁ, গ্রাম পার – বাঁকাপুর ইউপি শৈলগাছী ৯। শহীদ সামাদ পিতা মোঃ আহাদ আলী গ্রাম ও ইউপি হাপানিয়া ১০। শহীদ আফজাল হোসেন পিতা মৃত আব্দুর করিম ফকির গ্রাম বোয়ালিয়া পার নওগাঁ ৭ নং ওয়ার্ড ১১। শহীদ আব্দুর জব্বার পিতা মৃত আহমদ আলী সরদার গ্রাম ও ইউনিয়ন বক্তার পুর ১২। শহীদ নজরুল ইসলাম পিতা মোঃ বছির উদ্দিন সরদার গ্রাম ধামকুড়ি বোয়ালিয়া ২ নং ওয়ার্ড ১৩। শহীদ নবিবুর রহমান পিতা মোঃ আয়েন সরদার গ্রাম নামানূর পুর ইউপি তিলক পুর ১৪। শহীদ আব্দুল খালেক পিতা মৃত জরিপ সরদার গ্রাম দেবীপুর ইউ পি তিলক পুর ১৫। শহীদ নূরন্নবী পিতা কাজী সাখাওয়াৎ হোসেন গ্রাম কাজী পাড়া, নওগাঁ ১৬। শহীদ আব্দুল্লা আল মামুন পিতা ডাঃ নজরুল ইসলাম গ্রাম উকিল পাড়া, নওগাঁ ১৭। শহীদ মোসলেম উদ্দিন গ্রাম তাজ নগর ইউনিয়ন তিলক পুর নওগাঁ।

মহাদেবপুর থানা

১। শহীদ আশরাফুল ইসলাম পিতা মৃত আছির উদ্দিন মন্ডল গ্রাম বাগাচাড়া ১০ নং ভীমপুর ইউনিয়ন ২। শহীদ সাইদুর রহমান পিতা মৃত খজিমদ্দিন সরদার গ্রাম ও ইউ পি ৩ নং খাজুর ৩। শহীদ আয়ুব আলী পিতা মৃত দস‘ল মোল্লা গ্রাম দক্ষিণ পাড়া ২ নং খাজুর ওয়ার্ড ৪। শহীদ নূরল ইসলাম পিতা মৃত ওসমান মন্ডল গ্রাম হেলাল পুর ৩ নং এনায়েত পুর ওয়ার্ড ৫। শহীদ আমিনুল হক পিতা খুজুর আলী সরদার গ্রাম হর্ষি ১০ নং ভীমপুর ওয়ার্ড ৬। শহীদ হারুনূর রশিদ পিতা মৃত সামসুদ্দিন সরদার গ্রাম ডাঙ্গাঁপাড়া ৩ নং খাজুর ১ নং ওয়ার্ড।

রানীনগর থানা

১। শহীদ মকছেদ আলী পিতা মোঃ মেহের আলী মন্ডল গ্রাম ডাকাহার ইউনিয়ন একডালা ২। শহীদ ইছাহাক আলী পিতা মৃত কাদের আলী মাঝি গ্রাম ও ইউ পি পারাইল ৩। শহীদ ফরমান আলী পিতা মৃত হাজের আলী গ্রাম ও ইউ পি পারাইল।

আত্রাই থানা

১। শহীদ লুৎফর রহমান পিতা মৃত জসিম উদ্দিন গ্রাম ও ইউ পি শাহাগোলা ২। শহীদ মজিবর রহমান পিতা মৃত মাছিম উল্লাহ প্রামানিক, গ্রাম সিংড়া ইউ পি আহসান গঞ্জ।

ধামইর হাট থানা

১। শহীদ আব্দুর কাদের পিতা মৃত আয়েন উদ্দিন গ্রাম হজরতপুর ইউ পি আগ্রাদ্বিগুন, ধামইর হাট, নওগাঁ।

মান্দা থানা

১। শহীদ ময়েন উদ্দিন সরকার পিতা মৃত তয়েজ সরকার গ্রাম ও ইউ পি মৈনম ২। শহীদ হাসান পিতা অজ্ঞাত গ্রাম ও ইউ পি মৈনম, মান্দা নওগাঁ।

বদলগাছী থানা

১। শহীদ গোলাম সাকলাইন পিতা মৃত ধোন মোঃ সরদার গ্রাম, গয়ড়া, কোলা ইউ,পি ২। শহীদ ফরিদ উদ্দিন পিতা মৃত ভোলা গ্রাম শরমাপুর, বিলাশ বাড়ী ইউ,পি ৩। শহীদ ইসমাইল হোসেন পিতা মৃত আব্দুল কাদের মন্ডল, গ্রাম চাপাডালি, পাহারপুর, ইউ,পি ৪। শহীদ আব্দুল গণি পিতা মোঃ লইর গ্রাম চাপাডালি, পাহারপুর ইউ, পি ৫। শহীদ ইনমাইল হোসেন পিতা মুন্সি বাহার আলী মন্ডল গ্রাম খলষি বালুভরা ইউ,পি ৬। শহীদ আবু তাহের পিতা মৃত ফয়েজ আলী গ্রাম দোনইল, বালুভরা ইউ,পি ৭। শহীদ ফয়েজ উদ্দিন পিতা মৃত হেদায়েত উল্লাহ গ্রাম বেগুন জোয়ার আধাইপুর ইউ,পি ৮। শহীদ মিজানুর রহমান পিতা মৃত নজির উদ্দিন গ্রাম হায়শাপিলা, মাথুয়া পুর ইউ,পি ৯। শহীদ আব্বাছ আলী পিতা মৃত মহির উদ্দিন মন্ডল গ্রাম দূর্গাপুর মাথুরাপুর ইউ,পি ১০। শহীদ নবীর উদ্দিন পিতা মৃত কিনা মন্ডল গ্রাম ঝরখরিয়া কোলা ইউ,পি ১১। শহীদ মোকলেছুর রহমান পিতা ময়েজ উদ্দিন গ্রাম হলুদ বিহার, বিলাশ বাড়ি ইউ,পি ১২। শহীদ আমজাদ হোসেন পিতা মৃত মোঃ মফিজ উদ্দিন জোয়ারদার গ্রামও ইউ,পি বিলাশবাড়ি।

পত্নীতলা থানা

১। শহীদ আবু বক্কর সিদ্দিক পিতা মৃত তছির উদ্দিন গ্রাম আধাইপুকুর ইউ পি কৃষ্ণপুর ২। শহীদ নইমদ্দীন পিতা চেকু মন্ডল গ্রাম উষ্ঠি ইউ পি আকবর ৩। শহীদ আবুল কাশেম পিতা ওসমান আলী গ্রাম বড় মহরন্দী ৪ নং আকবর পুর ইউ পি ৪। শহীদ নজিমদ্দীন পিতা মৃত মংলু মন্ডল গ্রাম ছোট মহরা নদী, ইউ পি দিবর ৫। শহীদ শ্রী কমলা কান- পিতা মৃত শশিকান-, উত্তর রামপুর ইউ পি দিবর ৬। শহীদ প্রতাপ চন্দ্র মহন- পিতা প্রসন্ন কুমার মহন- গ্রাম কাশীপুর ইউ পি পাটি চুরিয়া ৭। শহীদ নূরল ইসলাম পিতা মৃত কমির উদ্দিন মন্ডল গ্রাম পাটিন্দর ইউ পি পাটিন্দর ৮। শহীদ ওমর আলী পিতা মৃত মীর বক্‌্র মন্ডল গ্রাম তকিপুর ইউ পি মাটিপুর ৯। শহীদ লাল মহাম্মদ পিতা মহির উদ্দিন মন্ডল গ্রাম তকিপুর ইউ পি মাটিন্দর ১০। শহীদ বাবু লাল পিতা মৃত কছিম উদ্দিন গ্রাম তকিপুর ইউ পি মাটিন্দর ১১। শহীদ শ্রী মতিলাল বর্মন পিতা মৃত সুরেন্দ্র নাথ গ্রাম তকিপুর ইউ পি মাটিন্দর ১২। শহীদ মফিজ উদ্দিন পিতা মৃত দুখু মন্ডল গ্রাম কোতয়ালী, ইউ পি ঘোষনগর ১৩। শহীদ ছামেদ পিতা মোঃ তছির উদ্দিন গ্রাম নন্দন পুর ইউ পি পত্নীতলা।

নিয়ামত পুর থানা

১। শহীদ সোলাইমান পিতা মৃত দস‘ল্লা মোল্লা গ্রাম গোরাই ইউ পি ভবিচা ২। শহীদ মকবুল হোসেন পিতা মৃত গিয়াস উদ্দিন মোল্লা গ্রাম গোরাই ইউ পি ভবিচ ৩। শহীদ নূরুল ইসলাম পিতা মোঃ মোসলেম উদ্দিন গ্রাম তালপুকুরিয়া ইউ পি চন্দন নগর ৪। শহীদ আনিছুর রহমান পিতা মৃত মজিবুর রহমান গ্রাম কৃষ্ণশইল ৬ নং পাড়ইল ইউ পি ৫। শহীদ কইমুদ্দিন মন্ডল পিতা মৃত সব মন্ডল গ্রাম রাম নগর ইউ পি চন্দন নগর ৬। শহীদ আজাদ হোসেন পিতা মৃত তজব আলী মন্ডল গ্রাম পাড়ইল ৬ নং পাড়ইল ইউ পি ৭। শহীদ আবু বক্কর পিতা মৃত পিয়ার আলী গ্রাম দিঘী পাড়া ৫ নং পাড়ইল ইউ পি।

সাপাহার থানা

১। শহীদ আঃ বশির পিতা আতাউর আলী গ্রাম কলমুডাঙ্গাঁ ৫ নং পাতাড়ী ইউ পি ২। শহীদ লুৎফর রহমান পিতা মৃত নজিমুদ্দিন মন্ডল গ্রাম গাঞ্জাপুরী ইউ পি সাপাহার ৩। শহীদ নমির উদ্দিন পিতা মৃত উপগাড়ী মন্ডল গ্রাম বাদউথরাইল ইউ পি তিলনা ৪। শহীদ জহির উদ্দিন পিতা মৃত ধনতুল্লা মন্ডল গ্রাম উত্তর কোলা পাড়া ইউ পি তিলনা ৫। শহীদ আলী মুদ্দিন পিতা মৃত মানেক চাঁদ গ্রাম চাঁদ উথরাইল ইউ পি তিলনা ৬। শহীদ ইসমাইল হোসেন পিতা মোঃ গুরু সরদার গ্রাম ফুট কইল ইউ পি শিরনটি উল্লেখিত বীর মুক্তিযোদ্ধা গণ যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে বিভিন্ন রনাঙ্গাঁনে শাহাদাৎ বরণ করেন। প্রিয় পাঠক মহল আমার এই তালিকায় যথেষ্ঠ নয়। আমার এই ক্ষুদ্র অনুসন্ধানের বাহিরেও অজস্র শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। এ জন্য লেখকের অক্ষমতাকে ক্ষমা সুন্দুর দৃষ্টিতে দেখবেন।

১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ নওগাঁ হানাদার মুক্ত


১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ শনিবার। সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসর মান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখরের নেতৃত্বে ও পশ্চিম দিনাজপুর বালুর ঘাট থেকে নওগাঁর দিকে অগ্রসরমান পি,বি, রায়ের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর কিছুই করার ছিল না। ফলে প্রায় দু হাজার পাক সেনা নওগাঁ কে,ডি স্কুল থেকে পি,এম, গালর্স স্কুল ও সরকারী গালর্স স্কুল থেকে শুরু করে পুরাতন থানা চত্বর ও এসডিও অফিস চত্বর থেকে শুরু করে রাস-ার দুই ধারে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে নত মস-কে আত্ম সমর্পন করে। এ সময় নওগাঁর বিহারী সমপ্রদায় স্ব – পরিবারে কে, ডি সরকারী স্কুলে আশ্রয় নেয়। তৎকালিন নওগাঁ মহকুমার এসডিও সৈয়দ মাগরুব মোর্শেদ মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে “জয় বাংলা” ধ্বনী দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং উপসি‘ত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। নওগাঁ ১৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়।

নওগাঁ মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য -১৯৯৬

মহান মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁর ভূমিকা ছিল বীরত্বপূর্ন গৌরবের স্বাধীনতা, মুক্তিযদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধে নওগাঁবাসীর অংশগ্রহন গৌরবময় ভূমিকাকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠার জন্য নওগাঁ লর্ড লিটন ব্রীজ মোড়ে ৩০ জুলাই ১৯৯৬ সালে “স্বাধীনতা” নামক মুক্তিযুদ্ধের ডাক ঘটি উদ্বোধন করা হয়। এটির প্রস-র ফলক উন্মোচন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মোঃ আব্দুল জলিল, এটি নির্মান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আখতার আহমেদ সিদ্দিকী।




মুক্তিযুদ্ধ নওগাঁ. ইনফো অবলম্বনে

Popular posts from this blog

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

পুদিনা চাষ ও গুনাগুন