নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিন তিনটি মেলার অনুমোদন দেওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা সব জেনেও না জানার ভান করছে। নওগাঁর মেলাগুলোতে অবাধে চলছে অশ্লীল নৃত্য, জুয়া খেলা, জম জমাট মাদক ব্যবসা। মহাদেবপুর উপজেলার পাঠাকাটা হাটে আনন্দ মেলা, এর নিকটবর্তি মান্দা উপজেলার সুতিহাটে রথযাত্রা মেলা চলছে। পাঁঠাকাটা-সুতিহাট এই দুটি মেলা পাশাপাশি উপজেলা মান্দা ও মহাদেবপুর মাত্র ৩ কি: মি: দুরে একই সঙ্গে বসায় মেল কর্র্র্র্তৃপক্ষ মেতে উঠেছে অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শনের প্রতিযোগীতায়। তারা মনে করছে যে যত বেশি অশ্লীল নৃত্য প্রদর্শন করবে তাদের দর্শক তত বেশি হবে।

এসব মেলাতে বাড়তি কোন দোকান পাট না থাকলেও রয়েছে পুতুল নাচ, যাত্রার নামে হাই-শো ও জুয়া খেলা, এ যেন যুবসমাজ ধংসের এক নতুন খেলা। এখানে পুলিশ রয়েছে পুতুলের মত দাড়িয়ে, মেলাগুলোতে সার্কাস, যাত্রাপালা ও পুতুল নাচের নামে চলছে চলচ্চিত্র নামধারী শিল্পিদের বক্ষবন্ধণী খুলে উলঙ্গ দেহ প্রদর্শন, যৌন উত্তেজক নাচ-গান , দেহ ব্যবসা, র‌্যাফেল ড্রর নামে লটারী, তাসবোর্ডের জুয়া, হাউজি এবং জমজমাট মাদক ও ফেন্সিডিল ব্যবসা।

স'ানীয় সচেতন মহল অনৈতিকতায় ভরপুর এ মেলাগুলোর অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট দাবী জানিয়ে আসলেও রহস্যজনক কারণে তাদের দাবীকে কোন আমলেই নেয়নি স'ানীয় প্রশাসন। মেলা বন্ধে কোথাও দাবী অথবা অভিযোগ করে কোন কাজই হবে না এ রকম প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মেলা কমিটি দর্শক যোগাতে আরো বেপরোয়াভাবে মেলায় চরম অনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেছে বলে স'ানীয়রা অভিযোগ করেন। এদিকে যশোর মুনিরামপুর থেকে আগত পদ্দা যাত্রা ইউনিটের ছনিয়া ও এনিকে মেলা কমিটির হানিফ ও জাহাঙ্গীর কু-প্রস-াব দিলে তারা রাজী না হলে হানিফ ছনিয়ার ও জাহাঙ্গীর এনির জোর পূর্বক শরিরের স্পর্শকাতর অংশে হাত দিয়ে শ্লিতাহানির চেষ্টা চালায়। ঘটনায় জরিতদের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় মামলা করতে গেলে মামলা গ্রহণ না করে শ্রী প্রদীব কুমার সাহাকে থানা থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে পদ্দা যাত্রা ইউনিটের শ্রী প্রদীব কুমার সাহা স্বাক্ষরীত একটি অভিযোগ নওগাঁ জেলা প্রশাসক বরাবর করা হয়।

উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে মান্দা উপজেলার সতীহাটে রথযাত্রা মেলায় গত বুধবার নওগাঁর সাংবাদিকরা পেশাগত দায়ীত্ব পালন কালে জুয়া খেলার ছবি তুলতে গেলে জুয়ারিরা তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক মোবাইল ফোনে মান্দা থানা ওসিকে জানালে তিনি অভিযোগটি না নিয়ে মেলা কমিটির সাথে মিমাংশার কথা বলেন। কমিটির সাথে কথা বললে তারা বলেন মেলার বিষয় নিয়ে লেখালেখি থেকে বিরত থাকলে মেলা শেষে ক্যামেরা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সংবাদপত্রে মেলার বিষয়ে কোন প্রকার সংবাদ প্রকাশ করা হলে ক্যামেরা ফেরত দেওয়া হবেনা এবং পরে বিষটি পুলিশ সুপারকে জানালে তিনি ব্যাবস'া নেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন- কোন ব্যবস'া নেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন যে, এ মেলা মাসব্যাপী চালানোর ঘোষণা দিয়ে উদ্বোধন হওয়া মেলাগুলোতে র‌্যাফেল ড্রর নামে কাকডাকা ভোর থেকে কয়েকশ' রিকসা, ভ্যান, ভুটভুটি ও পিকআপ ভ্যানযোগে র‌্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি শুরু করে। চলে একটানা রাত প্রায় ১১টা পর্যন-। এ সময়ের মধ্যে র‌্যাফেল ড্রয়ের লোভনীয় প্রলোভনে হাজার হাজার মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এসব যানবাহন টিকিট নিয়ে ছুটে চলে বিভিন্ন শহর, হাটবাজার ও প্রত্যন- পল্লী গ্রামে।

সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন- মেলা গুলোতে চালানো হচ্ছে হাউজী। নগদ টাকাসহ আকর্ষণীয় পুরস্কার দিয়ে চালানো হাউজীর একাধিক রাউন্ডের সময় আরো হাজার হাজার মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকা। বিকেল থেকে রাত ১২টা পর্যন- মেলাগুলোতে ঘেরা প্যান্ডেলে পুতুল নাচে পালাক্রমে শুরু হয় একদল নাবালিকার বস্ত্রখোলা নারীর যৌন উত্তেজক নাচ গান। এখানেও টিকিট বিক্রি করে উঠতি বয়েসের যুবকদের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
র‌্যাফেল ড্র, হাউজী ও পুতুল নাচের সাথে সাথেই সমানতালে মেলাগুলোতে চলে বেশ কয়েকটি তাসের বোর্ড, ফরগুটি, ঘুরণী, প্রকাশ্যে বিভিন্ন মাদক বিক্রি ও সেবন এবং গোপনে ওইসব নারীদের দেহব্যবসা। প্রকাশ্য জুয়ার বোর্ড, মাদক বিক্রি ও নারীদের দেহব্যবসা থেকেও নানা পেশার এবং বয়সের মানুষের পকেট থেকে লুটে নেয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
এসব কীর্তিকলাপের পাশাপাশি মেলাগুলোতে রাত ১২টা থেকে সকাল পর্যন- যাত্রার নামে শুরু করা হয় বহু নারীর সম্মিলিত উলঙ্গপণার ফাইনাল রাউন্ড। যাত্রার নামে নাচগানের উছিলায় সম্মিলিত নারীদেহের যে কসরত প্রদর্শন করা হচ্ছে সেটি বর্ণনা করতেও অনেকে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলেন। ফাইনাল রাউন্ড হাই-শো থেকেও লুটে নেয়া হচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকা। তারা বলেন মেলাটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণই হচ্ছে নারী দিয়ে দেহব্যবসা।


এভাবে মেলাগুলোতে সকালের সূচনা হয় র‌্যাফেল ড্রয়ের নামে মানুষের পকেটকাটা দিয়ে এবং শেষ হয় রাতের নারী কর্তৃক পুরুষের চরিত্র হণনের মাধ্যমে। অভিযোগকারীরা বলেন, হাউজি শেষে রাত ১২ টার পর থেকে চলে চলচ্চিত্র নামধারী শিল্পিদের বক্ষবন্ধণী খুলে উলঙ্গ দেহ প্রদর্শন, যৌন উত্তেজক নাচ-গান  মেলা কমিটির আয়োজক সভাপতি শ্রী মানিক চন্দ্র , সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা জানান মেলার পারমিশন নিতে লক্ষ লক্ষ টাকা জেলা প্রশাসনের এল আর ফান্ডে দিতে হয়েছে এ কারণে বাড়তি কিছু বিনোদন যোগ করা হয়েছে । মেলার স'ানটি সুতিহাট মাটাল পাড়ার মাদকপট্টি এলাকায় হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা মেলা কমিটির যোগসাজসে নির্বিঘ্নে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সমাজ বিধ্বংসী মেলা দ্রুত বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক এর হস-ক্ষেপ কামানা করছে এলাকার সুশীল সমাজ।


এসএনএনবিডি অবল্বমনে

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

পুদিনা চাষ ও গুনাগুন