খরার কারণে কৃষকদের বাড়তি খরচ শত কোটি টাকা

খরার কারণে বৃষ্টিনির্ভর আমন ধানের ফলন এবার সেচের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলে শস্যভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত বগুড়া, নওগাঁ ও জয়পুরহাটে খরা ইতিমধ্যে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বোরোর তুলনায় ফলন প্রায় ৪০ শতাংশ কম হওয়ার কারণে আমনের উৎপাদন খরচ এমনিতেই বেশি হয়। তার সঙ্গে এবার সেচখাতে বাড়তি ব্যয় যোগ হওয়ায় এ উৎপাদন খরচ আরও বাড়বে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুম জুড়ে খরা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে

ওই ৩ জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমি সেচের জন্য বাড়তি ১০০ কোটি টাকা খরচ গুণতে হবে কৃষকদের। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, আমন আবাদের জন্য জুলাই মাসে কমপক্ষে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ৩১ জুলাই পর্যন্ত বগুড়ায় মাত্র ৯১ দশমিক ০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। একই অবস্থা নওগাঁ ও জয়পুরহাটেও। দুই জেলায় জুলাই মাসে চাহিদার ৩ ভাগের ১ ভাগও বৃষ্টিপাত হয়নি। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কৃষকরা ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। প্রয়োজন মেটাতে মাঠে মাঠে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত গভীর-অগভীর নলকূপ চালু করা হয়েছে।

বগুড়ার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমন আবাদের প্রয়োজনে সেচপাম্প মালিকরা বোরো মৌসুমের জন্য সংরক্ষিত সংযোগগুলো আবারও নবায়ন করতে শুরু করেছেন। গত ১৫ দিনে অন্তত দেড় হাজার সংযোগ চালু করা হয়েছে। বিদ্যুৎ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, জেলায় ৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও মিলছে না। ফলে সেচপাম্পগুলিতে পালা করে বিদ্যুৎ দিতে হচ্ছে।

এদিকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ মিলছে না নওগাঁ ও জয়পুরহাটেও। বগুড়ার পশ্চিমাঞ্চলের কাহালু উপজেলার প্রতাপপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৌসুম পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে আমন আবাদ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিদ্যুতচালিত গভীর নলকূপ মালিকরা প্রতি বিঘা জমি সেচের জন্য তাদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিচ্ছেন। ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপে এ খরচ আরও ২০০ টাকা করে বেশি নেয়া হচ্ছে।

জয়পুরহাট জেলা গভীর নলকূপ মালিক সমিতির সভাপতি এডভোকেট নৃপেন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, খরার কারণে এবার ওই জেলার সিংহভাগ জমিকে সেচের আওতায় আনতে হয়েছে। আগস্ট মাসে বৃষ্টি হতে পারে- এমন আশায় আপাতত একবার করে সেচ দেয়া হচ্ছে। এ জন্য বিঘা প্রতি ১০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। তবে খরা দীর্ঘ দিন চললে একাধিকবার সেচের জন্য আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে।

নওগাঁ জেলাতেও খরার কারণে আমন ধানের আবাদ করতে গিয়ে সেচ খাতে কৃষকদের বিঘা প্রতি ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। গভীর নলকূপের তুলনায় অগভীর নলকূপে সেচ খরচ ১০০ থেকে দেড়শ টাকা বেশি।

হিসাব অনুযায়ী, গভীর-অগভীর মিলে বিঘা প্রতি সেচের গড় খরচ ৩০০ টাকা ধরলে ওই ৩ জেলায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমান আবাদের জন্য সেচ খাতে বাড়তি খরচ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বগুড়া কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ১ লাখ ৯২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার হেক্টরে আমন লাগানো হয়েছে। জয়পুরহাটে লক্ষ্যমাত্রা ৭৩ হাজার হেক্টরের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪৭ হাজার হেক্টর জমিতে ও নওগাঁয় টার্গেট করা ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে মাত্র ৭০ হাজার হেক্টরে আমনের আবাদ করা হয়েছে।

বগুড়ার কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মমতাজ হোসেন জানান, খরা পরিস্থিতির কারণে বৃষ্টির জন্য বসে না থেকে সেচের পানি দিয়ে আমন আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

অবল্বমনে শীর্ষ নিউজ ডটকম

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ