ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল ২৫ মার্চের কালোরাত আজ

ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল ২৫ মার্চের কালোরাত আজ। ৩৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের আজকের রাতে বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম ও পাশবিক হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল পাকিস্তানি হায়েনার দল। নিশুতি আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকার নিরীহ-নিরস্ত্র-অসহায় মানুষের ওপর। অপারেশন সার্চলাইট নামের ওই বর্বরোচিত হামলায় বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে দেখেছিল উন্মত্ত পাকবাহিনীর নির্বিচার গণহত্যা। মধ্যযুগীয় কায়দায় হানাদাররা রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গোটা ঢাকা শহরে চালায় হত্যাযজ্ঞ এবং অগ্নিসংযোগ। মেশিনগান-মর্টার-ট্যাংক দিয়ে হানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল অন্তত ৫০ হাজার ঘুমন্ত মানুষকে। হত্যাযজ্ঞ চলেছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস, শিক্ষক কলোনি, পুলিশ-ইপিআর ব্যারাক, আবাসিক এলাকা ও বস্তিতে বর্বর আক্রমণ চালিয়ে শুরু করেছিল নয় মাসব্যাপী ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ। বাংলাদেশকে নিশ্চিহ্ন করতে উৎসবে মেতে ছিল হায়নার দল। ওই রাতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সেই রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বর আক্রমণে সারাদেশে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রতিরোধে এগিয়ে আসেন সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। তারই ধারাবাহিকতায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। নীলনক্সা অনুযায়ী অপারেশন সার্চলাইট শুরুর জন্য রাত সাড়ে ১১টায় ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ফার্মগেটের মুখে হানাদার বাহিনী প্রথম প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। সেখানেই তারা চিৎকার করে গোটা ঢাকায় কারফিউ ঘোষণা করে। ছাত্র-জনতা বাধা দিলে তাদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয়। ডিনামাইটের মাধ্যমে ব্যারিকেড উড়িয়ে দিয়ে শহরে প্রবেশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় খণ্ডযুদ্ধ। সেনাবাহিনী প্রতিরোধকারী বাঙালি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাঙ্ক-মর্টার-রকেট ব্যবহার করে।
কবির ভাষায় সে সময়ের দৃশ্যপট এমনই ছিল-

শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মত চিৎকার করতে করতে
ছাত্রাবাস বস্তি উজাড় হলো
রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র

হানাদাররা রাত দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে জড়ো হয়। সেনারা বাসভবনে এলোপাতাড়ি গুলি নিক্ষেপ শেষে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। মধ্যরাতেই সেনাবাহিনী পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে। সেনারা পিলখানা ও নীলক্ষেতে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক, বাজুকা, মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল করে। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পিলখানা ইপিআর ব্যারাকের পতন হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন হামলাকারীদের কব্জায় আসে রাত ২টায়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায়, আগুনের লেলিহান শিখায় একদিকে নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়, অপরদিকে এ রাতের বিসর্জিত রক্তের ওপর দিয়েই পরদিন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় নতুন প্রতিজ্ঞার ইতিহাস। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে শুরু হয় মুক্তির জন্য যুদ্ধ। ২৫ মার্চের কালোরাতের বেদনাদায়ক ঘটনা সমগ্র জাতিকে শিহরিত করে। নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে নির্বিচারে পাখির মত গুলি করে হত্যা করে সেদিন মুক্তিকামী মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি। ২৫ মার্চের ভয়াবহ সেই কালোরাতের হত্যাযজ্ঞ বাঙ্গালীকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রণোদিত করে।
অবলম্বনে: এসএনএন মিডিয়া

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ