ডায়াবেটিস মেলাইটাস (Diabetes Mellitus)

আমাদের দেশে বর্তমানে বহুলোক ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত| কিন্তু কিছুদিন আগে সচেতনতার অভাবে অনেকে এ রোগের নাম শুনলে ভয়ে আঁতকে উঠতেন| কিন্তু বর্তমানে গণ-সচেতনতার ফলে এ রোগে সম্পর্কে কম-বেশী সকলেই অবহিত|

ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র হলো এমন এক ধরনের রোগ যাতে শরীরের শর্করা জাতীয় খাদ্য হজম হয়ে Glucose এ - পরিণত হয়| তা শরীরে শোষণ বা Absorb না হয়ে, প্রস্রাবের সঙ্গে অধিকাংশ বের হয়ে আসে, একে মূলত ডায়াবেটিস মেলাইটাস বলে| আমাদের রক্তের মধ্যে গ্লুকোজ থাকে| খাবার বেশি খেলে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ে|

আমাদের শরীরে একটি গ্লান্ড বা গ্রন্থি রয়েছে, যার নাম Pancreas| এই Pancreas বা অগ্নাশয়ের ভিতরে একটি কোষ বা Cell আছে, যার নাম Islets of Langerhans (আইলেটস্ অফ ল্যাঙ্গারহ্যানস্)| এই Islets of Langerhans থেকে Insulin নামক এক প্রকার রস বের হয়| এই Insulin এর জন্যই শরীরে ঠিকমতো গ্লুকোজ শোষিত হয়|

এই Cell বা কোষগুলির কর্মক্ষমতার অভাব হলে Insulin নি:সরণ কম হয় এবং যার ফলে রক্তে গ্লুকোজ বৃদ্ধি পায়|

ডায়াবেটিস মেলাইটাস ২ ধরণের হয় :
Type I
Type II
কারনসমুহঃ

ডায়াবেটিসের একদম প্রতিষ্ঠিত কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি| তবে নিম্নলিখিত কারণগুলোতে হতে পারে বলে মনে করা হয়|
বংশগতভাবে - সাধারণত বাবা-মায়ের এ রোগ থাকলে বাচ্চার মধ্য বয়সে এ রোগ হতে পারে|
অনেকের ভাইরাল Infection থেকেও হতে পারে|
এটি এক ধরনের Immune Disease |
অলস, মেদ প্রধান শরীরে এ রোগ বেশি হয় বলে মনে করা হয়|
Pancreas বা অগ্নাশয়ের সমস্যার কারণে এ রোগ হয়|
জন্মের পরে মায়ের দুধের পরিবর্তে গরুর দুধ পান করলে|

লক্ষনসমূহ:
রোগ ধীরে ধীরে শুরু হয়|
সাধারণত ৩চ হলো এ রোগের প্রধান লক্ষণ:
Polyuria : ঘন ঘন ও প্রস্রাব বেশি পরিমানে হওয়া|
Polydipsia: অতিরিক্ত পানির পিপাসা লাগে|
Polyphagia: অতিরিক্ত ক্ষিধে লাগা|
অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ সত্ত্বেও ওজন হ্রাস পাওয়া|
রোগী শুকিয়ে যায়
যৌনক্ষমতা ও যৌনশক্তি হ্রাস পায়|
যৌনে প্রদাহ হয়|
কোথাও ঘা হলে সহজে শুকাতে চায় না|
খুব দুর্বল লাগে|

বাড়িতে বসে Urine পরীক্ষা করা যায়:

১ টি Test Tube এ ৮/১০ ফোঁটা প্রস্রাব নিয়ে তাতে Benedicts solution (নীল রং এর) দিয়ে উত্তপ্ত করিলে যদি এর কালার(Color) বা রং এর পরিবর্তন হয় তবে ডায়াবেটিস হয়েছে বলে ধারণা করা হয় বা প্রস্রাবে সুগার আছে|

কালার(Color) বা রং পরিবর্তন :

সবুজ হলে (+) হয় = অতি সামান্য|
হলুদ হলে ++ হয় = বেশী|
কমলা হলে +++ হয় = আরো|
লাল বা ইটের রং হলে ++++ হয় = মাত্রাতিরিক্ত বেশি|

Blood Sugar করা যায়:

FBS [>7mmol/lt বা 120mg/dl /নল এর উপর গেলে]
2 HPPG (2 hrs post Prandial Glucose) [>11.1 mmol/lt gw 180 mg/dl]
RBS [>180 mg/dl]

চিকিত্সা
ডায়াবেটিস রোগ একেবারে সারে না| তবে এটা নিয়ন্ত্রণ করে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়| খাদ্য নিয়ন্ত্রণই এই রোগ চিকিৎসার একটি প্রধান অংশ| বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য গ্রহন থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে|
সাধারণত মেডিকেল সায়েন্সে ৩ টি ‘D’ অক্ষর সম্বলিত নিয়ম মেনে চলতে হয়:
D=Discipline বা নিয়মানুবর্তিতা|
D=Diet বা খাওয়া-দাওয়া|
D=Drugs বা ঔষধ|
তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যে সমস্ত ডায়াবেটিক হাসপাতাল রয়েছে তাতে জরুরী ভিত্তিতে গিয়ে যোগাযোগ করাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা| তারা নির্ধারণ করে দিবেন যে কারা মুখে ডায়াবেটিসের ঔষধ খাবেন বা কারা ইনসুলিন (যা চামড়ার নীচে দিতে হয়) নিবেন|
ব্যায়াম করা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ভালো|
কিছুদিন পর পর FBS এবং 2HABF পরীক্ষা করানো উচিত|
করনীয়ঃ

ডায়াবেটিস রোগীর খালি পায়ে হাঁটা উচিত নয়| (ঘা থেকে অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে)|
নিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপনই এর প্রধান চিকিৎসা|
নিয়মিত ডায়াবেটিস হাসপাতালে যোগাযোগ রক্ষা করবেন|
ডায়াবেটিস রোগীর নির্ধারিত খাদ্যের তালিকা মেনে চলা উচিত (যা ডায়াবেটিক হাসপাতাল কর্তৃক সরবরাহকৃত বই অনুযায়ী)|

জটিলতা :
ডায়াবেটিস যদি ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে(Control) না থাকে তবে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে| যেমন :

গ্লুকোজ অনেক সময় একদম বেশি কমে যেতে পারে (অতিরিক্ত Insulin দিলে)|
ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হতে পারে|
ষ্ট্রোক|
চোখের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে (Retinopathy)| চোখে ছানি পড়ে |
নার্ভের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে (Neuropathy)|
কিডনীর বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে (Nephropathy)|
হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে (MI)|
ঘা সহজে শুকাতে চায় না|

এখানে Type I ও এবং Type II এর কিছু তুলনামূলক চিত্র দেয়া হলো :


Type I Type II
(Type I ডায়াবেটিস) (Type II ডায়াবেটিস)
সাধারণত যুবক বয়সে হয় (<৪০ীড়)| সাধারণত মধ্য বয়সে বা বয়স্কদের হয়(>৪০ীড়)|
যারা শুকনো বা পাতলা তাদের হয়| যারা মোটা বা মেদী শরীর|
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়| মাস থেকে বছরও লাগে|
প্রস্রাবে কিটোন থাকে| প্রস্রাবে কিটোন থাকে না|
চিকিৎসা ইনসুলিন দিয়ে শুরু করতে হয়| এক্ষেত্রে ইনসুলিন জরুরী নয়|



তথ্যসূএঃ আপনার ডাক্তার

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ