নওগাঁর ৫ উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট নানা রোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ হুমকির মুখে

স্বাধীনতার তিনযুগ অতিক্রান্ত হলেও নওগাঁ জেলার ৫টি উপজেলার বেশকিছু গ্রামের হাজার হাজার মানুষের মৌলিক চাহিদা খাবার পানির কোনো সুব্যবস্থা আজো হয়নি। ফলে একবিংশ শতাব্দীতে আধুনিকতার দিনেও এসব গ্রামের অধিবাসীদের খোলা কূপ থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে জীবনধারণ করতে হচ্ছে। পরে কয়েকটি গ্রামে সুপেয় পানীয় জল সরবরাহ চালু হলেও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে এ সব গ্রামের অধিবাসীদের প্রয়োজনের তাগিদে এখনো মাঝে মধ্যেই খোলা কূপের পানি ব্যবহার করতে হয়।
বরেন্দ্রভূমি খ্যাত নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা, ধামুরহাট ও নিয়ামতপুর উপজেলার ভূ-প্রকৃতির গঠনগত কারণে এসব জেলায় পানির স্তর খুব নিচে। ফলে অনেক গ্রামেই কোনো অগভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এসব গ্রামে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হলে গভীর নলকূপের সাহায্য গ্রহণ অত্যাবশ্যক। অবশ্য এসব উপজেলার কিছু কিছু গ্রামে ১২০ থেকে ১৫০ ফুট গভীরতায় কূপ খনন করে খাবার পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৮৫ সালের আগে এসব বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষজন তাদের নৈমিত্তিক কাজে ব্যবহারের জন্য এলাকার বিভিন্ন নোংরা ও অগভীর পুকুর ও ডোবার উপরেই নির্ভরশীল ছিল। ১৯৮৫ সালে সরকার বরেন্দ্র এলাকার একফসলি জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করলে এসব এলাকায় সরকারের সহায়তায় বেশ কিছু গভীর নলকূপ খনন করা হয়। ফসলি মৌসুমে ডিজেলচালিত এসব গভীর নলকূপ থেকে তখন এলাকার সাধারণ মানুষ প্রথম সুপেয় পানীয় জল সংগ্রহ করার সুযোগ লাভ করে; কিন্তু বছরে মাত্র ৩ মাস এ বিশুদ্ধ পানি পেয়ে থাকলেও নওগাঁর ৮টি বরেন্দ্র খ্যাত উপজেলার মধ্যে ৫টি উপজেলার সাধারণ মানুষ বছরের বাকি ৯ মাস তাদের জীবন ধারনের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান পানির জন্য পুকুর, ডোবা কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে দু-চারটি কূপের উপরেই নির্ভরশীল ছিল। পরবর্তিতে পল্লী বিদ্যুতের প্রসার লাভ এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়াতে বরেন্দ্র এলাকায় গভীর নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও নলকূপ শুধু ফসলি মৌসুমেই চালু থাকার কারণে জন সাধারণ বছরের ৯ মাস আগের মতোই জীবাণুবাহিত অপরিচ্ছন্ন পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হতো।
১৯৯৬-২০০১ সালে তৎকালীন সরকার নওগাঁর ৮ উপজেলার বরেন্দ্র এলাকার পানীয় জলের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে এলাকার গভীর নলকূপ গুলোতে একটি করে জলাধার নির্মাণ করে পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকর ঘরে ঘরে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সুবিধার অভাবে উল্লিখিত ৫ উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে এখনো কোনো গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। ফলে নওগাঁর বরেন্দ্র এলাকার উল্লিখিত ৫ উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে এখনো পানীয় জলের জন্য খোলা কূপ কিংবা পুকুর ডোবার উপরেই নির্ভর করে দিন পার করতে হচ্ছে। আর এসব নোংরা ও জীবাণুবাহিত পানি ব্যবহারের কারণে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে নানা প্রকার চর্মরোগ, পেটের অসুখসহ বিভিন্ন জটিল রোগের সঙ্গে প্রতিনিয়তই সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
সূএঃ দৈনিক ডেসটিনি

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ