বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
রমজানের ফাযায়েল ও মাসায়েল
ভূমিকা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানী ও দয়া এই যে, মানুষের জন্য কিছু দিন ও সময় নির্ধারিত করে দিয়েছেন, যাতে করে আল্লাহর রহমত ও দয়ায় ভরপুর হয়ে যায়।
এবং বেশী করে আল্লাহর নৈকট্য ও উচু মর্যাদা অর্জন করা যায়।
আমাদের প্রিয় নবী (সা.) একটি হাদীসে রমজান মাসের এরূপ গুরুত্ব দিয়েছেন যে, আপন জিন্দীগীতে সৎকাজ কর, এবং আল্লাহর রহমতের দ্বারা পরিপূর্ন হও, যার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হয়, আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত হও। ঐ সকল বরকত ময় সময়ের মধ্যে রমজান মাস একটি পবিত্র মাস, যে মাসে তার বান্দার উপর আল্লাহ তাআলা রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন। যাহা ইসলামের মহান স্তম্ভ সমূহ থেকে একটি স্তম্ভ (বা রোকোন)।
আহলান সাহলান মাহে রমজান-পবিত্র রমযান মাসের ফজিলত এবং আগমনকে স্বাগতম।
রাসুল পাক (সা.) পবিত্র রমযান মাসের আগমনে সু-সংবাদ দিয়েছেন এবং রমজানের দিনগুলো ও সময়ের মূল্যায়নের দিকে উৎসাহিত করেছেন। অনুরূপ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বৎসরে সকল মাসের তুলনায় পবিত্র রমযান মাসকে বিশেষ ফজিলত ও বৈষিষ্ট দান করেছেন। এই রমযান মাসে লাইলাতুল কদর দান করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেছেন।
তোমাদের জন্য পবিত্র রমযান মাসকে পাঠানো হয়েছে মহান মাস হিসেবে- আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর উক্ত মাসে রোজাকে ফরজ করেছেন। রমজান মাসে আসমানের দরজা গুলো খুলে দেওয়া হয়। এবং জাহান্নামের দরজা গুলো বন্দ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বন্দী করা হয়। উক্ত মাসের একটি রজনী এক হাজার মাসের চাইতেও উত্তম। যে ব্যক্তি উক্তমাসের উত্তম প্রতিদান থেকে বঞ্জিত হল সে ক্ষতি গ্রস্ত হল। (নাসায়ী শরীফ)।
এই রমযানের ফজীলত অন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- তোমাদের দোয়া কবুল করা হবে। জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হবে পাপ সমূহকে ক্ষমা করা হবে। সালেহীন ও শহীদদের মর্যদা দান করা হবে। যে ব্যক্তি ঈমান ও ইখলাসের সাথে রমযান মাসের রোজা পালন করবে।
এটি কোরআন নাজিলের মাস, তাছাড়া উক্ত মাসের অনেক ফজিলত এবং বরকত আছে।
যে ব্যক্তি উক্ত মাসের দিন ও রজনী গুলো ঠিকভাবে আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জিন্দেগী রহমত ও বরকত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিবেন।
রোজার আহকাম সমূহ
ছয়টিগুন বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ ব্যক্তির উপর রোজা ফরজ হবে।
১. মুসলমান হতে হবে।
২. প্রাপ্ত বয়স্ক হতে হবে।
৩. সূস্থ মস্তিস্ক সম্পূর্ণ হওয়া।
৪. মুকীম হতে হবে।
৫. রোজা রাখার ক্ষমা থাকতে হবে।
৬. রোজা থেকে নিষেধ আছে এমন কারন না থাকতে হবে।
যে ব্যক্তির কাছে এসমস্ত শর্তগুলো পাওয়া যাবে তার উপর রোযা ফরজ হবে।
নিম্নে বর্ণিত ব্যক্তিদের উপর রোযা রাখা প্রযোজ্য নয়
১. কাফির তার উপর রোযা নেই তার কাজা ও প্রযোজ্য নয়। যখন ইসলাম গ্রহণ করবে তখন থেকে ইসলামের বিধান প্রয়োগ হবে।
২. অপ্রাপ্ত বয়স্ক, তারউপর রোযা প্রযোজ্য নয়, রোজার শর্ত না পাওয়া যাওয়ার কারণে। কিন্তু যদি যে আগ্রহ এবং শক্তি রাখে তার মাতাপিতার দায়িত্ব হলো তাকে রোযার প্রতি উৎসাহিত করবে। যাতে করে রোজা রাখার অভ্যস্ত হয়। যা সাহাবায়ে কেরামদের আদর্শ ছিল।
৩. পাগল তার উপর রোজা ফরজ নয়। এবং সুস্থতার পরও তার উপর পর্বের কাজা আদায় অপরিহার্য্য নয়। (ততক্ষণ পর্যন্ত রোজা ফরজ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে ভাল মন্দর পার্থক্য করতে পারে না। প্রাপ্ত বয়স্ক ও স্ুস্থ মানুষ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বক্তব্য ছিল যে তিন প্রকারের ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ তাআলা কলম উঠিয়ে নিয়েছে অর্থাৎ তার হিসাব কিতাব লিখা হয় না । পাগল যার মস্তীস্ক বিকৃত হয়েছে সুস্থ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, ঘুমন্ত যাগ্রত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, এবং শিশু প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।
দূর্বল বা অসুস্থ ব্যক্তি
শারীরীক শক্তি বা সামর্থ না থাকার কারণে তার উপর রোজা ফরজ নয়। রোগা বা অসুস্থ তাকে বুঝানো হবে যে ব্যক্তি রোজা রাখার কারণে তাররোগ বৃদ্ধি পায়।
রোযা রাখার অপরাগত রোগী দু প্রকার
এক. যে ব্যক্তি বার্ধক্য বা স্থায়ী রোগের কারণে রোজা রাখতে অপারগ এমতাবস্থায় ােজা ছেড়ে দিবে কিন্তু রমজান হিসাব করে প্রত্যেক রোজার জন্য একজন মিসকিনকে পেঠ ভরে খানা দিবে।
দুই. হঠাৎ উপস্থিত কোন রোগ, বা সমস্যার কারনে রোযা ছেড়ে দেয়া এসকল রোজার কাজা দিতে হবে। যখন ভাল অবস্থা ফিরে আসে।
তিন. মুসাফিরের জন্য রোজা ভঙ্গ করার অনুমতি রয়েছে রোজা রাখলে ও নিষেধ নেই। যা তার জন্য সহজ হয় তাহাই করবে। যদিও সফর জাহাজ, গাড়ী অথবা লঞ্চ হোক না কেন।
পরিশেষে নিষিদ্ধ জিনিষ থেকে পবিত্র হওয়া। যা মহিলা দের জন্য বিশেষভাবে। অর্থাৎ হায়েজ এবং নেফাসের সময় রোজা রাখা নিষেধ। সুস্থ অবস্থায় কাজা করা জরুরী।
দ্বিতীয় তার উপর ঐ রোজা ফরজ করা হয়েছে যে ব্যক্তি রাত্রিবেলায় রোজার নিয়্যাত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) অনুস্বরণ মোতাবেক নিয়ত হলো অন্তরে পরিপূর্ণ রোজা রাখার বিশ্বাস রাখা মুখে উচ্ছানের প্রয়োজন নেই।
যেমন কোন ব্যক্তি কাল রোজা সে জানে এবং সেহরী খাওয়ার জন্য রাত্রি বেলায় জাগ্রত হয়েছে, এবং রোজার উদ্দেশ্য সেহরী খেয়েছেন- এটাই হলো রোজার নিয়্যেত।
পবিত্র রমজানে মোস্তাহাব কাজ সমূহ পবিত্র রমজান মাসের চাদ দেখা মাত্র তাকবির উচ্চারণ করবে এবং রাসূল (সা.) বর্ণিত দোয়া পাঠ করবে যেমন----
যে ব্যক্তির উপর রোযা ফরজ সে ব্যক্তি ফজরের আজানের পূর্বে সেহরী খাওয়া মোস্তাহাব এটি বরকতময় খানা। সেহরী খাওয়ার দ্বারা দিনের বেলা রোজা পালনে শক্তি অর্জন হয় এবং এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)এর একটি মহান সুন্নতের অনুস্বরণ হয়। সাহরী খানার সময় রোযা দ্বারের জন্য আসমানের ফেরেশতাগণ দোয়া করতে থাকে।
এবং এ সাহরী খাওয়া আহলে কিতাব ইহুদী নাসারাদের রোজার বিপরিত হয়। অর্থাৎ অনুস্বরণ হয় না। এসকল কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত আছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছে যে, সাহরী খাওয়া বরকত ময় তা তোমরা ছাড়বে না। এক ডোক পানি হলেও পান করবে। নিশ্চয় সাহরী আদায় কারীর জন্য আসমানের ফেরেস্তাগণ দোয়া করতে থাকেন। (আল হাদীস)।
সাহরী আদায় করার জন্য উত্তম খাদ্য হলো খেজুর, রাসূলুল্লাহ (সা.) ফরমাইয়া ছেন।
মুমিনদের উত্তম সাহরী হলো খেজুর।
সাহরি খানার সময় হলো সোবহে সাদিক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ পূর্ব দিকে সাদা বর্ণ না দেখা পর্যন্ত সময় সেহরী খেতে পারবে। সোবহী সাদেক হয়ে গেলে খানা বন্দ করতে হবে।
হযরত আয়েশা (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, হযরত বেলাল (রাযি) রাত্রে (সেহরীর পুর্বে) আজান দিয়ে থাকেন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন যতক্ষন পর্যন্ত না উম্মে মকতুম আজান না দেয় ততক্ষণ পর্যন্ত খানা, পানাহার করতে থাক, কেননা উম্মে মকতুম সোবহে সাদিক হলে পরে আজান দিয়ে থাকে।
যে ব্যক্তি সোবহে সাদিক হলো কিনা সন্দেহে আছে সে খানা খাইতে পারবে। কারণ এখনো আসল কথা হলো আলোকিত না হওয়া। সোবহে সাদিক হলেইতো আলোকিত হয়ে যাবে। কিন্তু মেঘলা আকাশের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আকাশ মেঘলারত অবস্থায় ঘড়ি বা বিশস্ত সংস্থাদের সেহরী, ইফতার সময় সূচী বা মোয়াজ্জেনের আযানকে অনুস্বরণ করা যেতে পারে।
ইবনে মাঝায় বর্ণিত আছে যখন তোমরা সন্দেহযুক্ত হও সোবহে সাদিক হল কিনা তখন তোমাদের খানা, পানাহার করা হালাল বা বৈধ।
রাসুল (সা) এর সুন্নত হলো সেহরী দেরীতে করা। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমি নবী হিসেবে এই কথার নির্দেশ দিচ্ছি যে, ইফতার তাড়া তাড়ি কর এবং সেহরী দেরীতে কর।
রোজাদারের কিছু মোস্তাহাব আমল যাতে করে সহযে আল্লাহর ভালবাসা বা নৈকট্য অজর্ন করা যায় রাসূলে পাকের সুন্নতের অনুস্বরণ এবং আহলে কিতাবদের বিপরীত হয়।
যেমন যখন নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে সূর্য অস্ত গিয়েছে অতপর শিঘ্রই ইফতার করা মোস্তাহাব। এবং দেরী করে ইফতার করা মাকরুহ। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন রাত্র এমন হয়যে দিন দুরীভূত হয়েছে এবং সূর্য অস্ত গিয়াছে অতপর রোজাদার ইফতার শুরু করবে।
রাসূল (সা) আরো ইরশাদ করেন তাড়া তাড়ী ইফতার আদায় করা হল মঙ্গল। (হাদীস)।
রাসূল (সা.) অবস্থার পরিপেক্ষিতে ইফতার করতেন। তিনি নির্ধারিত বস্তু দিয়ে ইফতারী আদায় করতেন, হযরত আনাছ (রাযি) থেকে বর্ণিত যে রাসূল নামাযের পূর্বে কাচা খেজুর দ্বারা ইফতারী করতেন, তা সম্ভব না হলে শুকনো খেজুর দ্বারা। তাও যদি সম্ভব না হয় পানি দিয়ে ইফতার করতেন। ইফতারের সময় রাসূল (সা.) দোয়া পাঠ করতেন।----- --
অর্থাৎ- তৃঞ্চা দূরীভূত হলো গলা তরুতাজা হলো, রোযার বিনিময় অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক পাওয়া যাবে। এবং ইফতারের মুহুর্তে দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গলের জন্য দোয়া করাও সুন্নত কেননা রোযা দারের দোয়া কবুল করে থাকেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন ইফতার মুহুর্তে রোজা দারের দোয়া কবুল করা হয়।
রোজা দারের জন্য মুস্তাহাব কাজ সমূহ রাসূল (সা.) এর অনুস্বরণ করে সৎকর্ম অর্থাৎ নেক আমল বেশী বেশী করা। এবং বেশী করে ইসলামী শিক্ষার প্রচার প্রসার করা। এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা। দাওয়াতের দ্বীনের কাজ করা নিরীহ ও অসহায়গরীব মানবতার সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। কোরআন তেলাওয়াত বেশী বেশী করা। রাত্রি জাগ্রত হয়ে নামায আদায় করা। আত্বীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা এবং বৃদ্ধি করা। সেবা মূলক কাজে এগিয়ে আসা ইত্যাদি।
এছাড়া আরো অনেক সৎকর্ম রয়েছে যা রোজাদারের জন্য জরুরী। রাসূল (সা.) ছিলেন মানবতার শ্রেষ্ঠ দানশীল। রাসুল (সা.) বেশী করে দান করতেন যখন রমযান মাসে জিব্রাইল (আ.) রাসুলের (সা.) সাক্ষাৎ করতেন। পবিত্র রমযান মাসে প্রত্যেক রজনীতে কোরআন পাকের দরস দিতেন, অতপর রাসূল (সা.) রমযানে তুফানের ন্যয় দান খয়রাত করতেন।
ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) বলেন, আমি মানুষের প্রতি আশা রাখি যে তারা যেন পবিত্র রমযান মাসে রাসূল (সা.)এর অনুস্বরণ করে তাদের দান খয়রাতের মাত্রা বৃদ্ধিকরে দেন। এরূপ পরিপূর্ণ মুসলমান হয়েযাক রমযান মাসে।
পরিপূর্ণ রোজাদার
রোজাদারের জন্য করণীয়-
নিজ রোজাকে সম্পুর্ণ পাপাচার থেকে রক্ষা করা চাই।
এমন কাজ থেকে বিরত থাকা চাই যাহা, রোজাকে দুর্বল করে দেয় অর্থাৎ অসম্পূর্ণ করে দেয়।
তা হলো এমন কোন কর্ম করা যাহা আল্লাহ কতৃক নিষিদ্ধ করা হয়েছে অথবা এমন কর্ম না করা যাহা আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
এবং যে সকল হুকুমের প্রতি আল্লাহতাআলা সতর্ক করেছেন তা কর্নপাত না করা, ইত্যাদি।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- শুধু মাত্র খানা পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয় বরং সকল পাপকর্ম ও অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার অর্থই হলো রমজান।
যদি তোমাকে কেহ মন্দ কথা বা অতিরঞ্জিত কথা বলে প্রতি উত্তরে বলবে আমি রোজাদার (আল হাদীস)।
অন্যত্র রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি রোজা রত অবস্থায় পাপ কথা ছাড়তে পারলো না। অতপর তার খানা, পানাহার ছেড়ে দিয়ে উপবাস থাকে আল্লাহ তাআলার কিছু যায় আসে না। (হাদীস বোখারী শরীফ)।
সুতারং প্রত্যেক রোজাদারের জন্যও ওয়াজিব যে সে তার রোজাকে সকল ক্ষতিকর কাজ থেকে বিরত রাখবে।
রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ সমূহ-
যে সকল কারণে রোজা ভাঙ্গ হয় তাহা সকল রোজা দারগণকে অবগত হওয়া জরুরী। তা নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে।
১. ইচ্ছা কৃত ভাবে খানা ও পানাহার করা।
২. রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস করা কিন্তু যদি কেহ অপবিত্র অবস্থায় সোবহে সাদিক হয়ে যায় তার রোজা হয়ে যাবে।
৩. হযরত উম্মুল মোমেনীন আয়েশা (রাযি.) এবং হযরত উম্মে ছালমা কতৃক বর্ণিত যে রাসূল (সা.) সোবহে সাদিকের সময় পবিত্রতা অর্জন করতেন অতঃপর নামাজ আদায় করতেন। (আল হাদীস বুখারী ও মুসলীম)।
৪. অনুরূপভাবে যদি কাহারো দিনের বেলায় স্বপ্নদোষ হয় তার রোজা অটুট থাকবে। কেনা তাহা রোজাদারের ইচ্ছাতে নয়। কোরআন পাকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কেউ ভুলে কিছু খেয়ে পেলে তার রোজা ভঙ্গ হয় না। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি ভুলে কিছু খেয়ে নিল অথঃপর সে তার রেজাকে যেন পূর্ণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তাকে খানা বা পান করিয়েছেন।
এমন বস্তু গ্রহণ
যাহা খানা ও পানাহারের কাজ দেয়। যেমন ইঞ্জেকশন বা সেলাইন ব্যবহার করা যাহা খাদ্দের কাজ দেয়।
ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করা রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি করল তার উপর রোজার কাজ্বা নেই কিন্তু যে ইচ্ছা কৃত বমি করলো তার উপর কাজ্বা ওয়াজিব।
যে কোন কারনে বর্ষ্যি বাহির করা। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন রোজা আমার জন্য আমিই তার বিনিময় দিব। কারণ রোজাদার আমার জন্যই খানা পানাহারও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকে।
হায়েজ অথবা নেফাসের রক্ত আসা- রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন যখন হায়েজ এবং নেফাসের সময় আসবে রাজা আদায় করবে না।
রোজা ভঙ্গের শর্ত সমূহ-
ফকিহবীদ দের মধ্যে কোন এক ফকিহ বলেছেন যে, হায়েজ এবং নেফাস ছাড়া অন্য কোন কাজ অনিচ্ছা অথবা ভুলের কারণে সংঘঠিত হয়ে যায়। অতঃপর রোজা ভঙ্গ হইবে না।
রোজা দারের বৈধ কর্ম সমূহ-
রোজা ভঙ্গের যে সকল কারণ বর্ণনা করা হয়েছে তা ছাড়া অন্যান্য অবস্থায় রোজার কোন ক্ষতি হয় না। রোজা দারের জন্য বৈধ কর্ম সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
দাঁত পরিস্কার করা, দাঁত উঠানো রোজা দার দিনের বেলায় যে কোন সময় মেসওয়াক করা যায় । চোখে এবং কানে পানি জাতীয় ড্রাপ ব্যবহার কর উষধ হিসেবে।
প্রচন্ড গরমের কারণে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা অথবা পুকুরে সুইমিংপুলে ডুব দেয়া। রাত্রে বেলায় সোবহে সাদিকের পুর্বে স্ত্রী সহবাস করা।
হালাল উষুধ ব্যবহার করা। টিকা লাগানো। যদি তা খাদ্য জাতীয় না হয়।
শিশু কে দাতে পিসিয়ে কোন খাদ্য খাওয়া নো। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে করে তা কন্ঠনালির দিকে না যায়। সুগন্ধী আতর বা ধুয়া শরীরে ব্যবহার করা। আপন থুথু গিলে ফেলা।
অনিচ্ছায় মশা মাছি মুখের ভেতর চলে যাওয়া। পরিশেষে অছিয়ত করা যাচ্ছে যে,প্রত্যেক মুসলমান এই বরকত ময় মাসকে পাওয়ার পর যেন তার মুল্যায়ন ও কদর করে। এই মাসকে আমাদের জন্য আল্লাহ তআলা অশেষ মেহরবানী তা উপলব্ধি করা উচিৎ। সুতারং আল্লাহও তার রাসুলের অনুগত্যের মাধ্যমে এই রমজান মাসের পূর্ণ হক আদায় করবে এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত বান্দেগী করবে, যাতে করে সহজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়।
আমীন
(আতিউল্লাহ জুলফিকার)