এক জন মুক্তিযুদ্ধা জলিলের সাক্ষাৎকার (পর্ব 2য়)

প্র : এটা কোন সময়?



উ : ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে। তারপর আমরা নওগাঁ ‘মহকুমা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করলাম। সেই সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হলো।



প্র : এই সংগ্রাম পরিষদে আর কারা কারা ছিলেন-তাদের নাম আপনার মনে আছে?



উ : হ্যাঁ, সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন বায়তুল্লাহ সাহেব। মেম্বার ছিলেন ন্যাপ মোজাফফরের রকিব সাহেব, ন্যাপ ভাসানীর মাজহারুল হক পোনা সাহেব। আমাদের আরো নেতৃবৃন্দ তাতে ছিলেন। এম. এন. এ. এবং এম. পি. রাও ছিলেন। সংগ্রাম পরিষদে আওয়ামী লীগের লোকজন বেশি থাকলেও সেটা সর্বদলীয় ছিলো।



প্র : কমিউনিস্ট পার্টির কেউ তাতে ছিলেন কি?



উ : তখন কমিউনিস্ট পার্টির তৎপরতা নওগাঁতে ছিলো না। দুই ন্যাপ ছিলো।



প্র : ওয়ালী ন্যাপ, ভাসানী ন্যাপ?



উ : হ্যাঁ, তখন ওয়ালী ন্যাপ আর ভাসানী ন্যাপের তৎপরতা নওগাঁতে বেশ ছিলো।



প্র : নওগাঁ সংগ্রাম কমিটির অফিস কোথায় ছিলো এবং এই সংগ্রাম কমিটির ভূমিকা কি ছিলো?



উ : অফিস ছিলো নওগাঁ বার অফিসে, আইনজীবী সমিতির যে বিল্ডিংটা, সেখানে। ওটা ছিলো অফিস। ওখান থেকে গোটা মহকুমার আন্দোলন কর্মকান্ড কো-অর্ডিনেট করা হয়েছে। বিভিন্ন থানায় থানায়, গ্রামেগঞ্জে মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করার এবং সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বহু পলিটিক্যাল সভা, সমাবেশ এবং কালচারাল টিম পাঠিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে গোটা নওগাঁ মহকুমায় যা যা করা দরকার সে সব আমরা করেছি। সে সময় নওগাঁয় আর্টস কাউন্সিল ছিলো। সেই আর্টস কাউন্সিলেরও আমি ছিলাম সেক্রেটারি। নওগাঁ আর্টস কাউন্সিলকেও আমি ঐ আন্দোলন-সংগ্রামে সম্পৃক্ত করি। নওগাঁর যারা শিল্পী ছিলেন তাদের সবাইকে আর্টস কাউন্সিলের নেতৃত্বে নিয়ে এসে আমরা কয়েকটা কালচারাল টিম করেছিলাম। সেই কালচারাল টিমকে আমরা ট্রাকে করে গণসংগীতের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করার জন্যে গ্রামে গ্রামে, হাটে হাটে, থানায় থানায় পাঠিয়েছি। নওগাঁর অধ্যাপক মকবুল হোসেন একটা নাটক লিখেছিলেন। সেই ড্রামা আমরা মঞ্চস্থ করেছি। তারপরে ওখানে কৃষ্ণপদ সরকার নামে একজন অধ্যাপক ছিলেন। উনিও একটা ড্রামা লিখেছিলেন। তিনি নিজেও অভিনয় করতেন। আমরা এগুলো অরগানাইজ করেছি। এতে মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিলো এবং এ সবের মধ্যদিয়ে আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। সেই সময় অনেক জনসভা হয়েছে। আমরা সবাই মিলেই সে সব করেছি। আওয়ামী লীগ, ভাসানী ন্যাপ, মোজাফফর ন্যাপ আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবেই বিভিন্ন জায়গায় সভা, সমাবেশ করেছি। মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি এবং মানুষকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করতে পেরেছি।



১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পরে আমরা উপলব্ধি করলাম যে, আমাদের আরো প্রস্তুতির দরকার। তখন আমরা ওখানে ডামি রাইফেল দিয়ে অস্ত্রের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। এ জন্য উই গট দ্যা কো-অপারেশন ফ্রম ই.পি.আর অ্যান্ড পুলিশ। তাদের কাছ থেকে আমরা এ ব্যাপারে সহযোগিতা পেয়েছি।



এ প্রসঙ্গে আমি ঐ সময়ের একটা ঘটনার কথা বলতে চাই। ১ মার্চের পরে আমাদের ওখানে তখন ই.পি.আর-এর যে উইং ছিলো তার কমান্ডার ছিলেন মেজর আকরাম বেগ। তিনজন ক্যাপ্টেনও ছিলেন উইংয়ে। একজন ক্যাপ্টেন এজাজ, আরেকজন ক্যাপ্টেন আফজাল এবং আরেকজন ক্যাপ্টেন গিয়াস। এই তিন অফিসারের একজন ছিলেন বাঙালি, ক্যাপ্টেন গিয়াস। আর দু’জন ছিলেন পাঞ্জাবি। উইং কমান্ডার মেজর আকরাম, হি ওয়াজ অলসো ফ্রম পাঞ্জাব। মার্চ মাসে উইং কমান্ডার হিসাবে ওখানে আসলেন মেজর নজমুল হক উইথড্রইং আকরাম বেগ। আকরাম বেগ ওয়াজ সাপোজ টু লীভ ফর ওয়েস্ট পাকিস্তান ইন দ্যা মান্থ অব মার্চ। কিন্তু নজমুল হক পোস্টিং পাওয়া সত্ত্বেও তারা তাকে চার্জ দিতে গড়িমসি করছিলো। তাকে মেজর আকরাম চার্জ দিতে চাচ্ছিলো না। যাহোক, সেই সময় ওখানে কর্মরত বাঙালি-অবাঙালি ইপিআর-দের সাথে আমার একটা পারসোনাল রিলেশনশিপ গড়ে উঠেছিলো। আমি বিদেশ থেকে আসছিলাম তো! সেই সুবাদে ওরা মনে করতো যে, আমি খুব উচ্চ শিক্ষিত। ফলে, তাদের সঙ্গে আমার একটা ভালো রিলেশনশিপ ছিলো। পারিবারিকভাবেও তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছিলো। পাঞ্জাবি অফিসাররাও তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমাকে দাওয়াত করতো। আমিও যেতাম। আকরাম বেগ যখন মেজর নজমুলকে চার্জ দিতে তালবাহানা করছিলো তখন আমি তাকে বললাম যে, দেখো দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মেজর নজমুল হককে চার্জ দিয়ে তুমি চলে যাও। তারপরে সে চার্জ দিলো। চার্জ দিয়ে হি লেফট ফর ঢাকা।



প্র : এটা কত তারিখে?



উ : এটা ১৯৭১ সালের মার্চের ৪/৫ তারিখের দিকে হবে। তারপর সে রওনা হয় ঢাকাতে। কিন্তু নগরবাড়ি এসে সে ফেরি পার হতে পারে নাই। আবার হি ওয়েন্ট ব্যাক টু নওগাঁ।



প্র : তিনি কেন নদী পার হতে পারলেন না?



উ : তখন ফেরি সার্ভিস বন্ধ। জনগণই ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছিলো। জরুরী প্রয়োজনে ২/১ টা ফেরি হয়তো চলতো। কিন্তু আর্মি অফিসারকে তারা ফেরিতে উঠতে দেয় নাই। সে জন্য সে ব্যাক করে গেছে। ব্যাক করে যাওয়ার পরে হি ট্রায়েড টু টেকওভার পাওয়ার এগেইন।



যাহোক, ঐ ঘটনার আগে তাজের মোড় নামে একটা জায়গা আছে নওগাঁয়। আমি একদিন ওখানে গেছি। আমি আমার সাংস্কৃতিক দল পাঠাবো অন্য থানায়, ওখানে ট্রাকের জন্য গেছি। ট্রাক নিয়ে তাদের পাঠায় দেবো। আমি ওখানে রাস্তা ক্রস করছি, দেখি মেজর আকরাম বেগ। হি ওয়াজ ড্রাইভিং এ জীপ। উনি আমার কাছে সেই জীপটা দাঁড় করালেন। এটা বোধহয় উনি নগরবাড়ি যাওয়ার আগের দিন। উনি পরের দিন ঢাকা যাবেন। উনি আমাকে বললেন যে, আই অ্যাম গোইং টুমরো, আই অ্যাম লীভিং নওগাঁ। তোমার সাথে তো আমার আর দেখা হবে না। তোমাকে দাওয়াত করলে তো তুমি এখন আমার ওখানে আর আসো না। কেন আসো না আমি সেটা বুঝি। এই সময় তোমার পক্ষে আমার ওখানে গিয়ে পারসোনাল দাওয়াত খাওয়া অসুবিধা। তো নেক্সট টাইম ইউ গো টু পাকিস্তান, ইউ গো উইথ এ পাসপোর্ট। এটা সে আমাকে বললো। এই কথাটা যখন সে বললো তখন আমি সে কথায় গুরুত্ব দেই নাই। কিন্তু পরে আমি চিন্তা করলাম যে, এই কথাটা উনি কেন বললেন! তারপরে আমার মনে হলো, দে হ্যাভ ডিসাইডেড দ্যাট, অ্যান্ড দেয়ার উইল নট বি ওয়ান পাকিস্তান এগেইন। আমি চিন্তা করতে থাকলাম মেজর আকরাম-এর কথা ‘নেক্সট টাইম ইউ গো টু পাকিস্তান, ইউ গো উইথ এ পাসপোর্ট’। আসলে এই কথাটার অর্থ বোধহয় ছিলো দেয়ার উইল নট বি ওয়ান পাকিস্তান। তাদের মনোভাবটা আমি বুঝে গেলাম। ঐ দিনই আমার মনে একটা ইনডিকেশন আসলো যে, দে হ্যাভ ডিসাইডেড, দে উইল নট বি অ্যাবল টু কনটেইন ইস্ট পাকিস্তান অ্যালং উইথ ওয়েস্ট পাকিস্তান। পরদিন তো মেজর আকরাম চলে গেলেন। যাওয়ার পরে আবার উনি ব্যাক করলেন। ব্যাক করার পর উনি আবার নওগাঁ ইপিআর উইংয়ের চার্জ নেওয়ার চেষ্টা করলেন। আমরা নজমুল হককে উইং কমাণ্ডারের চার্জ নেওয়ালাম। নজমুল হক উইং কমাণ্ডার হিসাবে চার্জ নিলেন মার্চ মাসে।



নওগাঁ ই.পি.আর. উইংয়ে অনেক পাঞ্জাবি, বেলুচি ছিলো-আবার বাঙালি সৈনিকও ছিলো। আমাদের এলাকাটা তো বর্ডার এলাকা। বর্ডারের বিভিন্ন জায়গায় ইপিআর সৈনিকদের বেশিরভাগ পোস্টেড ছিলো। আর নওগাঁ ইপিআর উইং হেডকোয়ার্টারে অল্প কিছু ইপিআর ছিলো। উইং হেডকোয়ার্টারে আফাজউদ্দীন নামে একজন বাঙালি কোয়াটার মাস্টার ছিলেন। কালাম বলে একজন ছিলেন। আরো অনেকে ছিলেন, কিন্তু তাদের সবার নাম এখন ভুলে গেছি। আফাজের বাড়ি ছিলো গোপালগঞ্জ। সে আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করতো। সে তখন প্রায়ই বলতো যে, আমাদের রিভোল্ট করতে হবে। এ ব্যাপারে আপনি আমাদের প্রোটেকশন দেবেন। আমাদের কখন কি করতে হবে আপনি আমাদের বলবেন, আমরা সে ভাবে ব্যবস্থা করবো।



এ দিকে নওগাঁ ইপিআর উইংয়ে অন্য যে দু’জন পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন ছিলো তাদের মধ্যে ক্যাপ্টেন আফজালের ব্যক্তিগত চরিত্র ছিলো খুব খারাপ। তার ব্যাপারে বাঙালি ইপিআর জওয়ানরা খুব অসন্তুষ্ট ছিলো। সে বর্ডারে থাকতো এবং সেখানে সে মেয়ে টেয়ে নিয়ে এসে অসামাজিক কর্মকাণ্ড করতো। এ ব্যাপারে তার খুব বদনাম ছিলো। কিন্তু ঐ সময় হি লেফট বর্ডার এবং সে নওগাঁ ইপিআর উইং হেডকোয়ার্টারে অবস্থান নেয়। আরেকজন হচ্ছে ক্যাপ্টেন এজাজ। সেও বর্ডার থেকে চলে আসলো। এরা দু’জন আর মেজর আকরাম মোট তিনজন। মেজর আকরাম ফিরে আসার পর তারা প্লান করতে লাগলো যে, দে ওয়্যার টু টেক ওভার দ্যা উইং পাওয়ার। নওগাঁ ই.পি.আর. উইং হেডকোয়ার্টারে তার আগ পর্যন্ত বাঙালি, বেলুচ, পাঞ্জাবি সব মিলেমিশে ছিলো। ঐ পর্যায়ে এক সময় বাঙালি এন.সি.ও.-রা খেয়াল করলো যে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কিছু একটা করার চেষ্টা হচ্ছে। ওরা (বাঙালি ইপিআর-রা) আমাদের কাছে ষড়যন্ত্রের কথা জানিয়ে বললো যে, তবে পাঞ্জাবিরা একদিকে, বেলুচরা আর একদিকে। বেলুচদের মেন্টালিটি কিছুটা পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে। আমরা তাদের বললাম যে, দেখো পাঞ্জাবি-বেলুচি কাউকে বিশ্বাস করো না। ওদেরকে কমন এনিমি বলেই ধরে নাও। যদি কোনো সময় আমাদের কিছু করতে হয় তাহলে তাদের একভাবেই দেখতে হবে। ওদের এক পার্টকে আলাদা রেখে মানে অংশবিশেষ শত্রুকে পিছনে রেখে কিছু করা যাবে না। তোমরা সেভাবেই অরগানাইজ করো। তারপরে বাকি যেটুকু করার করা যাবে।



তখন নওগাঁর এস.ডি.ও. ছিলেন নিসারুল হামিদ নামে একজন সি.এস.পি. অফিসার। তিনিও পাঞ্জাবি ছিলেন। তাঁর সাথেও ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। তারও একটা ধারণা, আমি বিলেত থেকে এসেছি, উচ্চ শিক্ষিত মানুষ। এই জন্য তাঁর সাথে আমার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে ভুট্টোর সাপোর্টার ছিলো। অসহযোগ আন্দোলন যখন চরমে তখন সে বলতো, ভুট্টোকে আমি সাপোর্ট করি। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে ভুট্টোর মনোভাবটা আমি সাপোর্ট করি না। উনি আমাকে বলতেন যে, ভুট্টোর সাপোর্টার আমি ঠিকই কিন্তু স্কোপ পেলে ভুট্টোকে আমি বলতাম যে, তুমি বঙ্গবন্ধুকে সাপোর্ট করো এবং তোমরা দু’জন মিলে মিলিটারি আগ্রাসন থেকে দেশটাকে বাঁচাও। এই ছিলো তাঁর মনোভাব।



যাহোক, ইপিআর উইংয়ে যে তিনজন পাকিস্তানি অফিসার ছিলো তারা বের হতে পারে না বা বের হতে দেওয়া হয় না। কৌশলে তাদের ইপিআর উইংয়ের ভিতরেই আটকিয়ে রাখা হয়। ঐ সময় এস.ডি.ও. নিসারুল হামিদেরও কাজ ছিলো না। একদিন নিসারুল হামিদ আমাকে বললেন যে, আমি একা শহরে বের হতে ভয় পাই। আমি তাঁকে বলি যে, তুমি এক কাজ করো, সকাল ১০/১১ টার মধ্যে আমি এদিকের কাজ সেরে তোমাকে সাথে করে নিয়ে ই.পি.আর ক্যাম্পে দিয়ে আসবো। তুমি ওদের সাথে থাকো। আবার সন্ধ্যায় বা সন্ধ্যার পরে আমি তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে তোমার বাসায় পৌঁছে দেবো। এই সিকিউরিটিটা আমি তোমাকে দেবো। তোমার চিন্তা করতে হবে না। তো আমি ঐ ভাবে নিয়মিত কয়েকটা দিন তাকে সকালবেলা নিয়ে গিয়ে ই.পি.আর. ক্যাম্পে দিয়ে আসতাম। এ রকম করতে করতে যখন নাকি চরম একটা পর্যায় আসলো তখন আমরা মনে করলাম যে, এখন এই চারজনকে অ্যারেস্ট করা দরকার। আর এদেরকে ফ্রিডম দেওয়া যেতে পারে না।



প্র : কয় তারিখের দিকে এ কথা মনে হলো আপনাদের?



উ : এটা মনে হলো মার্চের ২৩ তারিখে। আমার মনে আছে ঐ দিন আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে কথা বললাম টেলিফোনে। আমি তাঁকে বললাম যে, কতদূর কি হলো, ঘটনা প্রবাহ কোন দিকে গড়াচ্ছে? বঙ্গবন্ধু বললেন যে, ‘গেট রেডি ফর ফাইনাল স্ট্রাইক’। এই ওয়ার্ডগুলো আমার মনে আছে, গেট রেডি ফর ফাইনাল স্ট্রাইক। এই কথা বলে উনি টেলিফোন রেখে দিলেন। আমরা সিগন্যাল পেয়ে গেলাম। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, এদেরকে আর বাইরে রাখা যাবে না।



প্র : ২৩ মার্চ?



উ : হ্যাঁ, ২৩ মার্চ। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ হবার পরই তাদের আটক করা হয়। কিন্তু ঠিক কখন তাদের আটক করা হয় সেই সময়টার কথা আমার মনে নাই। আমরা ঠিক করলাম যে, ওদেরকে আমরা অ্যারেস্ট করবো। তখন আমরা একটা বুদ্ধি করেছিলাম। ই.পি.আর. উইংয়ের অপজিটে একটা বাড়িতে ইপিআরের অফিসাররা থাকতো। আমাদের বাঙালি দু’জনকে বলা হলো, তাদের একজন ডাক্তার লুৎফর রহমান আর একজন ভদ্রলোক উনি সরকারি কর্মচারি ছিলেন, ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন। ওরা আবার তাস টাস খেলতো। আমরা তাদের বললাম যে, ক্যাপ্টেন এজাজের ওখানে আপনারা যাবেন এবং তাস খেলতে বসবেন। আর ওদের সবগুলোকে আমরা ঐ তাসের আসরে নিয়ে যাবো। একটা পর্যায়ে আমি ই.পি.আর. ক্যাম্পে বসে থেকে জরুরী কথা আছে বলে মেজর নজমুলকে ডেকে পাঠাবো। মেজর নজমুল হক চলে আসার পরে ওদের আমরা ঘেরাও করবো। ঘেরাও করে ওদেরকে সারেণ্ডার করাবো। এই পরিকল্পনা করে আমি ওদেরকে আর এস. ডি.ও. নিসারুল হামিদকে সঙ্গে নিয়ে ওখানে বসালাম। ওখানে ওরা তাস খেলা শুরু করলো। আমি চলে এলাম। দুপুরের দিকে বা তারপরে কোনো এক সময় আমি ই.পি.আর. ক্যাম্পে গিয়ে মেসেজ দিলাম যে, জরুরী একটা খবর আছে মেজর নজমুল হককে আমি ডাকছি। সঙ্গে সঙ্গে মেজর নজমুল হক চলে আসলো। তিনি আসার পরে বাড়িটা ঘেরাও করে ফেললাম আমরা।



প্র : কাদের নিয়ে ঘেরাও করলেন?



উ : পুলিশ আর বাঙালি ই.পি.আর.-দের দিয়ে। ঘিরে ফেলার পর ওদেরকে আটক করা হয়। পরে ওদেরকে নিয়ে আসা হলো ই.পি.আর. উইংয়ে। নিয়ে আসার পর আমি ওদেরকে বললাম যে, আপনাদের অস্ত্রগুলো আমাকে দিয়ে দেন। সবার সঙ্গে রিভলবার ছিলো। এস.ডি.ও. তার রিভলভারটা আমার হাতে দিলো। দুই ক্যাপ্টেনও তাদের রিভলভার আমার হাতে দিলো। কিন্তু আকরাম বেগ তার রিভলভার দিচ্ছিলো না। বলে, না আমি এটা দেবো না। আমি তাকে বললাম যে, দেখো, না দিয়ে পথ নাই। আমাকে তোমার রিভলভারটা দাও। এটা তোমার জন্য ভালো হবে। পরে সে দিলো। দেওয়ার পরে আমি নিসারুল হামিদকে বললাম, তুমি বাসায় যেতে পারবে না। তুমি এখানেই থাকো। তোমার নিরাপত্তার জন্যই তোমাকে এখানে রাখছি। তুমি চিন্তা করো না।



সেই সময় এস.ডি.ও নিসারুল হামিদ এক কাজ করে বসে। এটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। নিসারুল হামিদ হঠাৎ আমার পা চেপে ধরলো। ধরে বললো, দেখো আমার স্ত্রী আর একটা ছোট মেয়ে আছে। আমি আমার স্ত্রী আর আমার মেয়ের জন্য বলছি না। আমার এক ভাইয়ের মেয়ে আছে। যার মা তাকে ছেড়ে চলে গেছে এবং আমার ভাইও মারা গেছে। ঐ ছোট্ট মেয়েটাকে আমি মানুষ করি। আমার যদি কিছু হয় তাহলে ঐ মেয়েটা মানুষ হবে না, বাঁচবে না, মারা যাবে। তোমার কাছে অনুরোধ আর যাই করো, ঐ মেয়েটার স্বার্থে তুমি আমাকে জীবনে মেরো না। আমি তাকে বললাম যে, তোমাকে জীবনে মারার কথা আমরা চিন্তাও করি নাই। কিন্তু তোমাকে এখানে রাখছি ফর ইওর সেফটি। কারণ পরিস্থিতি যে অবস্থায় চলে গেছে সেই অবস্থায় তোমার এস.ডি.ও.-র বাংলোতে থাকা ঠিক হবে না। যে কোনো সময় জনগণ ওখানে অ্যাটাক করে তোমাকে মেরে ফেলতে পারে। যাহোক, ওদেরকে আমি ই.পি.আর. ক্যাম্পে রাখলাম। তারপরে আমি ই.পি.আর.-জেসিও এন.সি.ও. যারা ছিলো ওদেরকে ডাকলাম। কালাম, আফাজ এরা ছিলো। আর নামগুলো ভুলে গেছি, ওদের ডাকলাম। ওদেরকে নিয়ে আমি তার আগে বসতাম বাজারে একটা জুতার দোকানে। সেদিনও ঐ জুতার দোকানে বসলাম। জুতার দোকানের মালিক আমার বন্ধু তাজুল।



প্র : এটা কয় তারিখের দিকে?



উ : এটা ২৪ তারিখের দিকে হবে বোধহয়। তারিখটা আমার ঠিক মনে নাই। ঐদিন আমরা মেজর, ক্যাপ্টেনদের আটকায়ে দিলাম। এখন আমরা চিন্তা করছি যে, ওখানে যারা পাঞ্জাবি এবং বেলুচ সৈনিক আছে তাদের কিভাবে আটকাবো।



প্র : আপনি জুতার দোকানে বসলেন?



উ : হ্যাঁ, জুতার দোকানের পেছনে তাদের নিয়ে বসে বললাম যে, তোমরা একটা কৌশল করো, রাতে খাবার দেওয়ার সময় যখন তোমরা খেতে বসবা তখন টা দখল করতে হবে তোমাদের। কোত্‌টা দখল করে ওদেরকে আনআর্ম করতে হবে।



যাহোক, পাঞ্জাবি-বেলুচ সৈনিকরা তখনও বুঝতে পারে নাই যে, ওদের মেজর বা অফিসাররা অ্যারেস্ট হয়েছে। ই.পি.আর. লাইনে যেন কোনো মেসেজ না যায় সে রকম একটা ব্যবস্থা করে রাখা ছিলো। তারপর ঠিক হলো যে, রাতে খেতে বসবে সবাই। ঐদিন একটা ইমপ্রুভ ডায়েটের ব্যবস্থাও করা হলো। আমি ওদের কিছু টাকা দিলাম। দিয়ে বললাম যে, তোমরা ভালো খাবারের ব্যবস্থা করো। বাঙালি জোয়ানরা আগে বসবে না। পাঞ্জাবি ও বেলুচ জওয়ান যারা আছে তাদেরকে আগে বসায়ে দেবা। ঠিক তখনই বাঙালিরা কোতটা দখল করে নেবে। কোত্‌ মানে অস্ত্রাগার। খোদাই আমাদের সাহায্য করেছেন। সব প্ল্যানই আমাদের কার্যকর হয়েছে। সবাইকে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওরা বোঝেও নাই যে, আজ শুধু পাঞ্জাবি আর বেলুচদের খেতে বলছে কেন? ওদেরকে খেতে বসিয়ে দিয়ে কালাম, আফাজ ওদের পরিকল্পনা মতো কাজ শুরু করে। তখন কোতে এক পাঞ্জাবি ডিউটিতে ছিলো। ওকে আনআর্ম করে কোত দখল করে নিয়ে ওদেরকে ঘেরাও করা হলো। ঘেরাও করে ওদেরকে নিয়ে আসা হলো।



প্র : এরা সংখ্যায় কত ছিলো?



উ : ১২১ জন।



প্র : ১২১ জনের সবাই কি অবাঙালি?



উ : হ্যাঁ। ১২১ জন, উইথ ফ্যামিলি। এদেরকে ফ্যামিলিসহ নিয়ে আসলাম আনসার ক্যাম্পে। আনসার ক্যাম্পেই ওদেরকে আমরা আটক করে রেখে দিলাম। মেজর, ক্যাপ্টেন এবং এসডিওকে ইপিআর ক্যাম্পের সামনের বাড়িতে আর সাধারণ জওয়ানদের আনসার ক্যাম্পে। সেদিন থেকে আমরা সিভিল প্রশাসন এবং ইপিআরের টোটাল কমাণ্ডটা নিয়ে নিলাম।



প্র : পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৭১ সালের ২৫-২৬ মার্চের আক্রমণ সম্পর্কে আপনি কি শুনেছিলেন বা ঐ খবর কখন পেলেন?



উ : এই খবর আমরা পেলাম পরদিন ২৬ মার্চ।



প্র : কি ভাবে পেলেন?



উ : নানাদিক থেকে খবর পেলাম যে, ঢাকায় কি যেন একটা হয়েছে। টেলিফোনে আশপাশের জেলা থেকেও খবর পেয়েছি। ঢাকা থেকেও কেউ হয়তো জানিয়েছিলো। যেভাবেই হোক আমরা খবর পেলাম যে, ঢাকায় ক্র্যাক-ডাউন হয়েছে। এটা ২৬ তারিখেই আমরা জানতে পেরেছি।



প্র : স্বাধীনতা ঘোষণার ব্যাপারটা কি তখন আপনারা কেউ জানতে পেরেছিলেন?



উ : না। তখন বঙ্গবন্ধু ছাড়া স্বাধীনতার ডাক কে দেবে? ২৫ মার্চ রাতে যখন ক্র্যাক-ডাউন হয়েছে তখন আমি বলছি যে, বঙ্গবন্ধু হয়তো স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তা না হলে ক্র্যাক-ডাউন হবে না। এইটা আমরা ভেবেছি কিন্তু কোনো ঘোষণা আমরা শুনি নাই। চট্টগ্রাম বেতারের ঘোষণাও আমরা শুনি নাই। আমরা পরে বি.বি.সি.-তে খবর পেলাম।



প্র : এটা কত তারিখে?



উ : এটা ২৬ তারিখ সন্ধ্যায়। খবর পেলাম যে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। ঢাকায় ক্র্যাক-ডাউন হয়েছে। স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছে।



প্র : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের গ্রেফতার হওয়ার খবর আপনি ২৬ তারিখেই বি.বি.সি. থেকে পেলেন?



উ : বি.বি.সি.থেকে তো ২৬ তারিখেই বলেছে যে, বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হয়েছেন।



প্র : যখন আপনারা খবর পেলেন যে, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন এবং তিনি গ্রেফতার হয়েছেন তখন আপনারা কি পদক্ষেপ নিলেন?



উ : আমরা আমাদের কর্মীদের তখন বলেছি যে, বিভিন্ন রাস্তাঘাটে ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য। নওগাঁ অভিমুখী রোডগুলা মানে রাজশাহী থেকে, বগুড়া থেকে আসার যে রাস্তাগুলো ছিলো, সেইগুলাতে আমরা সব ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য জনগণকে বলেছি। আমরা আমাদের কর্মীদের রাস্তায় গাছপালা কেটে ফেলে দেওয়ার জন্য বলেছি।



প্র : রাস্তায় ব্যারিকেড দিলেন কেন?



উ : আমাদের তো তখন অতো আইডিয়া ছিলো না যুদ্ধ সম্পর্কে। মনে করলাম যে, ব্যারিকেড দিলেই হয়তো পাঞ্জাবিরা আসতে পারবে না। আমরা ভাবলাম যে, এটা করলে তারা আর নওগাঁ দখল করতে পারবে না। আমরা নওগাঁকে ঠিক রাখতে পারবো।



প্র : পাক আর্মিদের কোন্‌ দিক থেকে আসার সম্ভাবনা ছিলো নওগাঁয়?



উ : পাক আর্মিদের রাজশাহী থেকে আসার সম্ভাবনা ছিলো, বগুড়া থেকেও আসার সম্ভাবনা ছিলো। ওরা রংপুর থেকে বগুড়া দিয়ে নওগাঁয় আসবে এ রকম সম্ভাবনাও ছিলো।



আর একটা কথা, ১ মার্চ থেকে সান্তাহারে বিহারীরা একটা ম্যুভ নিয়েছিলো। ওখানে অনেক মানুষের জীবন গেছে। অনেক বিহারীও মারা গেছে। পরবর্তীকালে আমরা তাদের কিছু রেসকিউও করেছি। ওখানে হাজারের উপরে বিহারী মারা গেছে। একটা ঘটনা বলি।



১ মার্চে আমরা খবর পেলাম যে, সান্তাহারে একটা বাড়িতে আগুন লাগিয়ে একজন বিহারীকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এই খবর পাওয়ার পরে আমরা ক্যাপ্টেন গিয়াসকে ওখানে পাঠালাম। তার আগে ই.পি.আর.-এর ওখান থেকে আমাকে খবর পাঠালো যে, নওগাঁয় একজন বিহারী লিডার আছে তারও জলিল নাম। ইপিআর ক্যাম্পে বসে সে নিজে আমার সাথে কথা বলবে। সান্তাহারের ঘটনা নিয়ে তারা আমার সাথে আলাপ করবে। আমি যেন ইপিআর ক্যাম্পে যাই। তখন আমার বন্ধু বান্ধব এবং রাজনৈতিক সহকর্মীরা বললো যে, না আমরা এখন আর তোমাকে ই.পি.আর.-এর ওখানে যেতে দেবো না। ঐ মেজরের ওখানে গেলে তারা তোমাকে জিম্মি করবে। এই সম্ভাবনা আছে। সুতরাং তোমাকে আমরা ওখানে যেতে দেবো না। বিহারীরা আবার কি কথা বলবে? দে মাস্ট কাম টু আস। আমি তাদের বললাম যে, ওখানে আমার যাওয়া দরকার। অন্তত ঘটনাটা জেনে একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে। ঐ সময় মেজর নজমুল হক ও ক্যাপ্টেন গিয়াস বললো যে, ঠিক আছে আমরা আপনার নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিচ্ছি, আপনি আসেন। আমরা এখানে তাদের সাথে একটু কথা বলে নেই। তখন আমি সেখানে গেলাম।



আমি ক্যাপ্টেন গিয়াসের সঙ্গে ওখানে গেলাম। যাওয়ার পরে ঘটনাটা শুনলাম। শুনলাম যে, আগের দিন রাতে ওখানে (সান্তাহার) একটা বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। আগুনে পুড়ে বা অন্য কোনোভাবে একজন বিহারী মারা গেছে। তো আমি বললাম যে, ঠিক আছে ওটা দেখার জন্য আমি সেখানে যাবো। আসলে ব্যাপারটা কি হয়েছে সেটা দেখার জন্যই যেতে চাইলাম। মেজর নজমুল এবং ক্যাপ্টেন গিয়াস তখন বললো, না, সান্তাহারের টোটাল কন্ট্রোল বিহারীদের হাতে। ওখানে আপনাকে আমরা যেতে দেবো না। আপনি যেতে পারবেন না। ক্যাপ্টেন গিয়াস বললো যে, আমি আমার ফোর্স নিয়ে গিয়ে আগে দেখে আসি। দেখি ব্যাপারটা কি। উনি গিয়ে দেখে আসলেন। এসে বললেন যে, আসলেই আপনার যাওয়া দরকার। আপনি আমার সঙ্গে চলেন। তখন ক্যাপ্টেন গিয়াসের সঙ্গেই আমি গেলাম ওখানে। বোধহয় সন্ধ্যার দিকে আমি গেলাম।



সান্তাহারে গিয়ে আশেপাশের লোকজনকে আমি ডাকলাম। ডাকার পরে আমরা তাদের বললাম যে, ব্যাপারটা কি? ওখানে যেটুকু বুঝলাম সেটা হলো, একজন বিহারীর শাশুড়ির নামে একটা ইনসিওরেন্স করা ছিলো। ঐ ইনসিওরেন্স ক্লেম পাওয়ার জন্য সে বুড়িকে মেরে ফেলেছে। আগুন লাগিয়ে মেরে ফেলে সে দুই পারাপাস সার্ভ করেছে। এক হচ্ছে ইনসিওরেন্স ক্লেম করবে আর দুই, গুজব বা ধোয়া তুলবে যে, বিহারীর বাড়িতে বাঙালিরা আগুন লাগায় দিয়েছে। বিহারী-বাঙালি উত্তেজনা সৃষ্টি করার জন্য এই পরিকল্পনা নিয়ে ওটা করা হয়েছে। এদিকে যে আগুন লাগিয়েছিলো সে আগুনটা লাগিয়ে দিয়েই কিন্তু চলে গেছে সৈয়দপুর। হি লেফট সান্তাহার। ওখানে গিয়ে আরেকটা খবর পেলাম যে, যে বাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে তার পাশেই একটা দোতলা বাড়িতে বোমা বানানো হচ্ছিলো। বোমা বানানোর সময় তার দু’টা বিস্ফোরিত হয়ে যায়। তাতে দু’জন আহত হয়। আমরা সেখানেও গেলাম। দেখলাম যে, ঐ বাড়িটার কিছু অংশ ড্যামেজ হয়েছে।


সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর নাম : ড. সুকুমার বিশ্বাসসাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ : অগাস্ট ১১, ২০০৫ ও অগাস্ট ৩১, ২০০৫ মূল প্রবন্ধ: প্রফাইল-বাংলা

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ