সংবাদ পরিক্রমা

নির্মম আর বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে কুয়েত থেকে গতকাল দেশে ফিরেছেন কয়েক শ’ বাংলাদেশি শ্রমিক। তাদের কেউ কেউ বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে যোগ দিলেও অনেকেই নিরপরাধ। গতকাল ভোরে দেশে ফিরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীর কাছে তারা তুলে ধরেন কুয়েতি আইন-শৃগ্ধখলা বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের কথা। তারা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা বলেন, প্রচন্ড মারধরের পর তাদের রাবার দিয়ে বেঁধে কড়া রোদের মধ্যে রাস্তায় ফেলে রাখা হয় ৩ ঘণ্টা। খালি পায়ে হাঁটানো হয় উত্তপ্ত রাস্তায়। নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে পানি পানি বলে চিৎকার করেও পাওয়া যায়নি পানি এমন অভিযোগও করেছেন এক শ্রমিক। এভাবে দফায় দফায় পেটানোর প্রায় দুই দিন পর শেষে মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাদের জোরপহৃর্বক তুলে দেওয়া হয় বাংলাদেশমুখী বিমানে। অথচ তাদের সবাই ধর্মঘটে ছিলেন না। অনেকেই জানেন না কী তাদের অপরাধ। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আসে যাদের হাত দিয়ে দেশের সেই সোনার ছেলেদেরই একজন মহসিন। কুয়েত থেকে ফিরে গতকাল সাংবাদিকদের জানান আটককৃত বাংলাদেশিদের ওপর কুয়েতি আইন-শৃগ্ধখলা বাহিনীর নির্যাতনের কথা।

মহসিন বলেন, ‘আমাদের ধরে নিয়ে একটি মিলিটারি ক্যাম্পে সামনে জড়ো করা হয়। রাবার দিয়ে আমাদের দুই হাত পিঠের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। সেখানে গরম পাকা রাস্তায় আমাদের ফেলে রাখা হয়। ৩ ঘণ্টা পর তারা আমাদের ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যায়। সেখানে বন্দি করে রাখা হয়। শুরু হয় প্রচন্ড মারধর। সেখানে মিলিটারির এলোপাতাড়ি মারধর থেকে কেউই রেহাই পাননি। মহসিন আরো বলেন, তারা (মিলিটারিরা) আমাদের দেশে পাঠিয়ে দেবে বলে জানায়। সোমবার রাতে একবার এজন্য বিমানে পাঠাবে বলে তারা আমাদের গাড়িতে তোলে। এ সময় তারা আমাদের একজনের সঙ্গে আরেকজনের হাত বেঁধে রাখে। আমাদের পরনে তখন কোনো কাপড় ছিল না। সেখান থেকে আবার আমাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়। চলে আরো কয়েক দফা নির্যাতন। হঠাৎ দেশে ফেরা নির্যাতিত এ শ্রমিক জানান, সেনাবাহিনীর কেন্দ্রের (ক্যাম্পের) ভেতরে রাখার পর মারধরের কারণে বিভিন্ন জনের হাত ফুলে যায়। কারো পা ভেঙে যায়। কারো মাথা ফেটে যায়।
কুয়েতের একটি ব্যাংকে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে ৩ বছর ধরে কাজ করতেন মহসিন কামাল। গতকাল তাকেও বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। চাঁদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছার পর বিবিসিকে তিনি জানান, কুয়েতের নিরাপত্তাবাহিনী তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেকের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। কারো হাত-পা ভেঙে গেছে। কেবল মানুষের চিৎকার আর হাহাকারই শুনেছি মিলিটারিদের পেটানোর সময়। এর মধ্য অনেক মানুষ পানি পানি বলে চিৎকার করে বলেছে ‘আমাকে একটু পানি দেন, আমাকে একটু পানি দেন।’ কিন্তু তৎক্ষণাৎ পানি পাওয়া যায়নি। যারা শরীরে বিভিন্নভাবে জখম হয়েছে তাদের সামান্য ওষুধও দেওয়া হয়নি।
কামাল আরো বলেন, সোমবার রাতে আমাদের বিমানে নেওয়া হবে বলে দু’জন দু’জন করে একসঙ্গে হাত বেঁধে একটি গাড়িতে তোলা হয়। পরে বিমানে তুলে না দিয়ে আবারো কেন্দ্রে ফেরত আনা হয় এবং একসঙ্গে দু’জন করে বাঁধা অবস্থায় আমাদের সারারাত দাঁড়িয়ে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এভাবেই আমাদের ফেরত পাঠানো হয়। তিনি আরো বলেন, আমরা আসার সময় কিছুই আনতে পারিনি। আমাদের পায়ে জুতা ছিল না। পরনে কারো লুঙ্গি, কারো গেঞ্জি, কারো গায়ে শার্ট ছিল।

দৈনিক সমকাল অবলম্বনে

--------------------------------------------------------------------------------

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ