নদীতে বাঁশরে বেড়া দিয়ে মাছ শিকার

নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীতে নিষিদ্ধ ঘেরজাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। শ্রীমন্তপুর ঘাট থেকে মিঠাপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার নদীতে ৭০ থেকে ৮০টি স্থানে এভাবে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে স্থানীয় মত্স্যজীবীরা নদীতে জাল ফেলতে পারছেন না।
সরেজমিন ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। এসব প্রতিবন্ধকতার কারণে স্বাভাবিক নৌযান চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। উপজেলার মদনচক গ্রামের লোকমান হোসেন, বানডুবি গ্রামের আশরাফ হোসেন, বৈদ্যপুর গ্রামের ফায়েজুল হোসেনসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গোপিনপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক, ভালাইন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ইব্রাহিম হোসেন, বানডুবি গ্রামের হরেন্দ্রনাথ, কালিকাপুর গ্রামের হারুন, বৈদ্যপুর গ্রামের বারেকুল ইসলাম, গোড়রা গ্রামের আফাজ পিয়াদা, পাঁঠাকাটা গ্রামের বিমলচন্দ্র হাওলাদার, জোতবাজারের প্রদীপ হাওলাদার, পারইল গ্রামের মোজাম্মেল হকসহ মান্দা উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত কয়েকজন কর্মচারী নদীতে এই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বেশির ভাগ পয়েন্টে নিষিদ্ধ ঘেরজাল ও বাঁশের বেড়া ব্যবহার করা হয়েছে।
উপজেলার হাটোর-বৈলশিং মত্স্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, ব্যক্তিমালিকানায় তৈরি এসব পয়েন্টে মাছের জন্য খাবার দেওয়া হয়। খাবারের জন্য সেখানে মাছ জড়ো হয়। কয়েক দিন পরপর সেই মাছ শিকার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তার দপ্তরে কয়েক দফা অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় মত্স্যজীবীদের অভিযোগ, ইউএনও কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী জড়িত থাকায় প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
গোপিনপুর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক, ভালাইন ইউপির সাবেক সদস্য ইব্রাহিম হোসেনসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা নদীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে দাবি করেন, নদীর কিনারায় কাটা (নদীতে জাল বা বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গা) দেওয়া নিষিদ্ধ নয়।
নদীর বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ঘেরজাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীতে এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি মত্স্য আইনের পরিপন্থী। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ মত্স্য কর্মকর্তা জানান, নদী দখলমুক্ত করার দায়িত্ব তাঁর দপ্তরের। কিন্তু সীমিত জনবলসহ বিভিন্ন কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না।
ইউএনও মুন্সী মনিরুজ্জামান জানান, মত্স্যজীবী সমিতির অভিযোগ পাওয়ার পর সপ্তাহ দুয়েক আগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আবারও অভিযান চালানো হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, তাঁর দপ্তরের কোনো কর্মচারী ওই দখলপ্রক্রিয়ায় জড়িত, এমন অভিযোগ তিনি পাননি।

সূএ: প্রথম আলো

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ