ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্তির জন্য সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে গড়ে তুলতে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ

মহান মুক্তিযুদ্ধ আত্মত্যাগ ও গৌরবের মহিমায় উদ্ভাসিত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস। মহান বিজয় দিবসের এই পরম লগ্নে আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি -স্বাধীনতার প্রবাদ পুরুষ জাতির-জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং জন্ম হয় বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। আমরা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি অগণিত দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের যাঁরা অকাতরে দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ পাক-হানাদার মুক্ত হয়েছিলো। অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাগণ বিজয়ীর বেশে এই দিনে ময়মনসিংহ শহরে বীরদর্পে প্রবেশ করেছিলো। অভিষিক্ত হয়েছিলো নতুন স্বদেশে। সেদিনের সে মাহেন্দ্রক্ষণ আমাদের মনে চির-জাগরুক হয়ে থাকবে। আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই সব বীর সেনাদের।

স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে দেশকে মেধাশূন্য করার হীন মানসিকতায় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঘাতকগোষ্ঠি দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিলো। মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি রক্তভেজা বেদনাবিধূর দিন ১৪ ডিসেম্বর। ইতিহাসের এই বর্বরতম হত্যাকান্ডে সমগ্র জাতি শোকাভিভূত। তাঁদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা লাভের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির-জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা বিরোধী চক্রেরই যোগসাজশে জঘন্য চক্রান্তে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। জাতির ললাটে এর চেয়ে বড় কালিমা আর কী হতে পারে ? গত ১৯ নভেম্বর এ জঘন্য হত্যাকান্ডের বিচারের ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা হয়েছে, ঘাতকদের ফাসির আদেশ বহাল রাখা হয়েছে। জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। একইসাথে মানবতা বিরোধী এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ গণমানুষের দাবি অবিলম্বে এ ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের আপামর জনগণের অংশগ্রহণ থাকলেও পাক-হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকার, আলবদর, আল শামস্সহ একটি ঘাতকচক্র মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিল। এই ঘাতকচক্র তথা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে জনগণ আজ সোচ্চার। এই বিচার প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করা হবে বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে।

আজ দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় অগ্রগতি ও গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মত ও পথের ভিন্নতা সত্ত্বেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হওয়া। আমাদের স্বাধীনতাকে আরো অর্থবহ করে তোলার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে দিন বদলের পালা। ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্তির জন্য সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে গড়ে তুলতে হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমাদের জলবায়ু, মাটি ও মানব সম্পদের সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূচিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রয়াসে, কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানী, গবেষক ও সম্প্রসারণ কর্মীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ-বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে পথিকৃত ভূমিকা রেখে চলেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের সকল সামর্থ ও সদিচ্ছাকে সুসংহত করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।



লেখক: খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও ভাইস-চ্যান্সেলর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
সূএ: এন ওয়াই বাংলা

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ