হঠাৎ করে কেন এই রহস্যজনক আত্মপ্রকাশ ------ ড. ইয়াজউদ্দিন

অপ্রত্যাশিতভাবে বিতর্কিত সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ গত পরশু একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এ সাক্ষাৎকারের সময় তাকে অনেকটা বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। এ সাক্ষাৎকারে তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেছেন, কখনো একই প্রশ্নের ভিন্নভাবে জবাব দিয়েছেন, কখনো বলেছেন এর জবাব স্মৃতিতে নেই, তার লেখা বইয়ে এ প্রশ্নের জবাব জানা যাবে। তবে তিনি এ সাক্ষাৎকারে সুস্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন, তার নির্দেশেই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর বিতর্কিত অভিযান তিনি শুভ কাজ বলে অভিহিত করেন। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে দেশে জরুরি অবস্খা জারিকে আল্লাহর নির্দেশে শুভ কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনে কী কী ঘটেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই জিনিসটা আমার মনে নেই, বই লিখছি, তখন জানতে পারবেন’। পরে জানতে চাওয়া হয় তখন কিভাবে মনে পড়বে? জবাবে তিনি বলেন, ‘হয়তো মনে পড়বে’।
হঠাৎ করে টেলিভিশনে তার এ রহস্যজনক উপস্খিতি ও সাক্ষাৎকার জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন কারো প্ররোচনায় কিংবা চাপে তিনি এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছেন। কিংবা তাকে ভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য এনে কৌশলে এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে হয়তো কোনো মহলের প্ররোচনাও কাজ করে থাকতে পারে। এমনটি মনে হওয়ার একটি কারণ হলো­ তিনি সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে বলেছেন, আমরা তো এখানে এ বিষয়ে কথা বলতে আসিনি, এসেছি ভিন্ন বিষয়ে বলতে।
এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্খান থেকে দর্শকরা সরাসরি টেলিফোনে অংশ নেন। এক পর্যায়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দিন উমর ভিন্ন স্খান থেকে সরাসরি অংশ নেন। তিনি সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে প্রশ্ন করেন­ ‘আপনি সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। বইয়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকা অসুবিধাজনক, জাতি আপনার কাছ থেকে জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আপনি বলছেন আল্লাহর নির্দেশে সব কিছু করেছেন। আপনি সত্যি করে বলুন তো এগারো জানুয়ারিতে আল্লাহর নির্দেশে নাকি সেনাবাহিনীর নির্দেশে জরুরি অবস্খা জারি করেছিলেন?’ ড. ইয়াজউদ্দিন এর জবাব সরাসরি না দিয়ে বলেন, আমি পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এক-এগারোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের পদ থেকে কেউ জোর করে তাকে পদত্যাগপত্র লিখে স্বাক্ষর করিয়েছিল কি না, কেউ পদত্যাগপত্র লিখে দিয়েছিল কি না, কাগজ এগিয়ে দিয়ে সই করতে বলল আর আপনি সই করলেন কি না­ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ’ বলে ওঠেন। পদত্যাগপত্রটি কে এনেছিল, কী বলেছিল­ এ প্রশ্নের জবাব তিনি দেননি।
এমনই নানা স্পর্শকাতর বিষয়ের উল্লেখ ছিল তার সাক্ষাৎকারে। পুরো সাক্ষাৎকারে তাকে খুবই নার্ভাস মনে হচ্ছিল। একই প্রশ্নে তিনি যে ভিন্ন ভিন্ন জবাব দিয়েছেন তাও স্বীকার করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে হঠাৎ করে কেনই বা তিনি এই সাক্ষাৎকার দিলেন এবং কেনই বা এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে কিছু বললেন আর কিছু বিষয়ে বললেন না। তিনি বলেছেন, তার নির্দেশেই শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কাউকে গ্রেফতার করা-না-করার বিষয়টি সাংবিধানিকভাবে আদালতের কিংবা রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান নন। অতএব তিনি যদি তা করে থাকেন তাও তা করেছেন সংবিধান লঙ্ঘন করে। এর দায় তাকে নিতে হবে। তার সামনে রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের সৃষ্ট উদাহরণও ছিল। তিনি তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কোনো চাপের মুখে তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারেন না। কারণ তিনি সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়েছিলেন।
একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতিরও এক ধরনের স্বনির্ধারিত প্রটোকল মেনে চলতে হয়। তা তিনি পারেননি। এই রহস্যজনক সাক্ষাৎকার প্রদানের বিষয়টি কারো প্ররোচিত কি না, সে প্রশ্নও রয়ে গেল। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্খা জারি করে দেশকে গণতন্ত্রহীন রাখার কাজটি স্বার্থান্বেষী মহল ড. ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছিল। এ প্ররোচনা তাদের পক্ষ থেকে কি না সে প্রশ্নও আসে। সবচেয়ে বড় কথা, ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক গোঁজামিল দিয়েছেন। সে গোঁজামিলের অবকাশ আর নেই। এখন তাকে হয় চুপ থাকতে হবে, নইলে যা সত্যিকার অর্থে ঘটেছিল তা খোলাখুলি বলতে হবে। উল্লিখিত সাক্ষাৎকারের মতো আমতা আমতা করার সুযোগ নেই।
তিনি এ সাক্ষাৎকারে আরেকটি গর্হিত কথা বলেছেন যে, আল্লাহর নির্দেশে এসব কাজ করেছেন। যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অমার্জনীয় অপরাধ। তিনি দুই নেত্রীকে গ্রেফতারের নির্দেশকে ঠিক কাজ বলে মনে করেছেন। নির্বাচনের পর তিনি নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন জনগণ তার এই সিদ্ধান্ত কোন দৃষ্টিতে দেখে। দুই নেত্রীই জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। আমরা মনে করি, বিষয়টি হালকাভাবে দেখা ঠিক হবে না। সরকারের উচিত হবে এই রহস্যজনক সাক্ষাৎকারের কারণ খুঁজে বের করা।

সৌজন্য: দৈনিক নয়া দিগন্ত

Popular posts from this blog

“নওগাঁয় মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা”

নওগাঁয় পূর্বের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে,মেলায় অবৈধ ব্যাবসা

দূর্নীতি ছেয়ে আছে নওগাঁ বিটিআরএ